• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০১৯, ০৯:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০১৯, ০৯:২৫ পিএম

কাউন্সিল ঘিরে চাঙা ছাত্রদল নেতাকর্মীরা 

কাউন্সিল ঘিরে চাঙা ছাত্রদল নেতাকর্মীরা 
ছাত্রদলের লোগো

দীর্ঘ ২৭ বছর পর এই প্রথম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দীর্ঘদিন পর সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হওয়ার এ পদক্ষেপে অনেকটা চাঙা হয়ে উঠেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রত্যাশা, সরাসরি কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের ভোটের মধ্যদিয়ে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে আবারও দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে হারানো গৌরব ও শক্তিশালী অবস্থান ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। 
জানা গেছে, কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের ভোট পেতে বর্তমানে সারাদেশে সফর করছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা। তারা প্রতিটি জেলা/মহানগর ও ইউনিটের সুপার ফাইভ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। 

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নির্বাচনে আপিল কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দৈনিক জাগরণকে বলেন, ছাত্রদলের নির্বাচনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মেধাবী ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব গড়ে তোলা।
দুদু বলেন, ছাত্রদলে নতুন সম্ভাবনাময় দিন সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা উদ্যোগী হয়ে একটি ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এই কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে এদেশে স্বৈরতন্ত্রের পতনের অতীতে যে দৃষ্টান্ত ছাত্রদল স্থাপন করেছে, ভবিষ্যতেও সেই দৃষ্টান্তকে উজ্জ্বল করবে তারা। 

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র মূলদল বিএনপির মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতিতে এক সময়ের দেশের ছাত্ররাজনীতিতে অন্যতম শক্তিশালী এ ছাত্রসংগঠনটি ধীরে ধীরে ক্ষয়িঞ্চু শক্তিতে পরিণত হয়। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সংগঠনের নেতৃত্ব মনোনয়ন ও দায়িত্ব পাওয়ার পর টাকার বিনিময়ে নিজেদের পছন্দের পকেট কমিটি গঠন ছাত্রদলকে নির্জীব ও নিষ্ক্রিয় সংগঠনে পরিণত করে। 

এক সময়ে ছাত্রদলকে বলা হত বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসেবে। জনশ্রুতি আছে, ইতোপূর্বে একাধিকবার বিএনপির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পেছনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল মূলদলের চেয়েও বেশি। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ডের অর্বাচীনসূলভ মানসিকতা ও মূল দলের নেতাদের ‘গুটিবাজী’র হাতিয়ার হয়ে উঠায় ছাত্রদল তার অতীত ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। যার প্রাশ্চিত্ব বিএনপিকে দিতে হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। খোদ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত তার মুক্তির দাবিতে একটি কার্যকর আন্দোলনও করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। আর এর পেছনে মূল কারণ ধরা হয়, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাকে। মূলত ‘খালেদা জিয়া’ মুক্তি আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকেই বিএনপির হাইকমান্ড ছাত্রদলকে পূনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেই আলোকে আগামী মাস সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে ছাত্রদলের কাউন্সিলে দিনক্ষণ ঠিক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সারাদেশ থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ওইদিন প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের পরবর্তি নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।
 
ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান। শুরুতে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হলেও দীর্ঘদিন পর সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়  ঢাউস সাইজের ৭৩৬ জন দিয়ে, যা নিয়ে দেশের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক হাস্যরসের জন্ম দেয়। অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে এর অধিকাংশকে পদ দেয়া হয়।
ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ডাকসুর সাবেক জিএস সাবেক ছাত্রদল নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি,  সংগঠনের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। 

গত ৩ জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়।  প্রার্থী হতে বিএনপি শর্ত দেয়,  প্রার্থীদের অবিবাহিত হতে হবে। ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। দেশের কোনো না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রত্ব থাকতে হবে। শুধুমাত্র  ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে এসএসসি/সমমান পাশ কারীরা প্রার্থী হতে পারবে। প্রার্থীদের ন্যূনতম স্নাতক পাসের সনদের সত্যায়িত অনুলিপি জমা দিতে হবে।

ছাত্রদলের কাউন্সিল উৎসবমুখর হবে আশা প্রকাশ করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ছাত্রদলের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও চর্চা অব্যাহত রাখতে চাই। সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেধাবী, দক্ষ, প্রতিভাবান নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের অর্ন্তভূক্ত প্রতিটি ইউনিটের সুপার ফাইভ সামনের কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত করবে। ছাত্রদলের মোট ইউনিটের সংখ্যা ১১৭টি। এসব ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকরা (মোট ৫জন) তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কাউন্সিলে ওই ১১৭ ইউনিট থেকে মোট ৫৭৫ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন। ভোট গ্রহণ করা হবে ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। ভোট গ্রহণের এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ভেন্যু নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে ১৯ ও ২০ আগস্ট। বাছাই চলবে ২২ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। প্রার্থিতা  প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ আগস্ট। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত।

টিএস/বিএস 
 

আরও পড়ুন