• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম

আবারও ভাঙছে ওয়ার্কার্স পার্টি! 

আবারও ভাঙছে ওয়ার্কার্স পার্টি! 

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বক্তব্যের পর চাপে থাকা বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ১৪ দলকে সন্তুষ্ট করতে পারলেও নিজ দলের ভাঙন ঠেকাতে পারছেন না। কমিউনিস্ট আদর্শের বাইরে গিয়ে বুর্জোয়া রাজনীতিতে স্বাদ পাওয়ার অভিযোগ তুলে একে একে দল ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন পার্টির নীতি নির্ধারক পলিটব্যুরোর সদস্যরা। পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও পার্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে ওয়ার্কার্স পার্টি রীতিমত অস্থিতিতে পড়েছে। পার্টিতে কমিউনিস্ট আচরণ না থাকায় বুর্জোয়া পার্টিতে পরিণত হয়েছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা একে একে বের হয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস দল ছেড়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় ওয়ার্কার্স পার্টির আরও ছয় কেন্দ্রীয় নেতা দলের আসন্ন কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। 

দল ছাড়ার ঘোষণা দেয়া কয়েক নেতা দৈনিক জাগরণকে জানান, খুব দ্রুততম সময়ে পার্টির আদর্শের প্রতি অনুগত নেতারা নতুন দল গড়তে যাচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভাঙন এখন সময়ের অপেক্ষায় পরিণত হয়েছে।
 
ওয়ার্কার্স পার্টির সিনিয়র এক নেতা দৈনিক জাগরণকে জানান, আজ  সোমবার কয়েক নেতা পার্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সামনে আরও বেশ কয়েক নেতা ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়ার ঘোষণা দেবেন। তবে টেকনিক্যাল কারণে এই মুহুর্তে সেসব নেতার নাম আমরা প্রকাশ করবো না।

তিনি আরও বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টি ও পার্টির শীর্ষ নেতারা এখন আর কমিউনিস্ট আদর্শের মধ্যে নেই। তারা অনেক আগে থেকেই বুর্জোয়া রাজনীতির স্বাদ পেয়ে গেছেন। নিজেরাও অর্থকড়ির মালিক হয়েছেন। সেই কারণে নাম প্রকাশ হয়ে পড়লে তারা টাকা বা অন্য কোনো প্রলোভনে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করবে। তাতে করে আমাদের উদ্দেশে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান নীতির বিরোধিতাকারীরা ভিন্ন একটি দল গঠন করে বাম জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই তারা দল গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন। বিমল বিশ্বাসকে সভাপতি করে ওই দল গঠন করা হবে।ঃ

ওয়ার্কার্স পার্টি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই পার্টি থেকে পলিটব্যুরোর ১৫ সদস্যের মধ্যে ৩ জন বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলেন- নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ ও মনোজ সাহা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পলিটব্যুরোর আরও ৬ সদস্য বের হয়ে যেতে পারেন। অপরদিকে দল ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আরও ৪ নেতা। তারা হলেন, জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, অনিল বিশ্বাস ও তুষার কান্তি দাস।

দল ছেড়ে যাওয়া নেতারা খুব শিগগিরিই আরেকটি দল গঠন করতে যাচ্ছেন। নতুন দল ক্ষমতাসীনদের জোটে যোগ না দিয়ে পুরনো বামসঙ্গীদের সঙ্গে জোট করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। 
এদিকে, কেন্দ্রীয় কংগ্রেস (২ থেকে ৫ নভেম্বর) সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য চরমে উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে রাজনীতির অঙ্গনে এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির ভাঙন। গত মঙ্গলবার ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাসের পদত্যাগে পার্টিতে ভাঙ্গনের সুর বেঁজে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি গত মঙ্গলবার ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ৬ জন ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বের হয়ে যাওযার ঘোষণা দিয়েছেন।  

ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ছয় নেতা বলেন, পার্টি সভ্যপদ যাচাই না করে অবৈধ প্রতিনিধিদের নিয়ে কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হলে তা হবে অবৈধ কংগ্রেস। তাই নতজানু আপোসকামী তথা তালমিল করে চলার নীতি পরিহার করে আদর্শের প্রতি অবিচল থাকতে আমরা ১০ম পার্টি কংগ্রেসে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  

পলিটব্যুরোর এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টি এখন আর কমিউনিস্টদের দখলে নেই। এটা এখন বুর্জোয়াদের দখলে চলে গেছে। যারা কমিউনিস্ট নীতি আদর্শের তারাই দল থেকে বের হয়ে আসছেন। পার্টিতে বিভাজনের সংখ্যা আর কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলেও জানান তিনি।  এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই পলিটব্যুরোর ৫/৬ সদস্যের বের হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কথায় আছে বৃক্ষ তোমার ফলে পরিচয়।
  
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পলিটব্যুরোর কয়েক সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির ৪  সদস্যরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করে সরকারের অন্যায় কর্মকাণ্ডে সমর্থন জোগানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মতে, সরকারের সঙ্গে থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য অনিয়ম, দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছেন। সরকারের হেফাজত তোষণের নীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়নি ওয়ার্কার্স পার্টি। ফলে পার্টি তার কমিউনিস্ট আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।

এদিকে কংগ্রেস সামনে রেখে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্মেলনগুলোতে ভিন্নমত অবলম্বনকারীদের প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক তর্ক-বির্তক হচ্ছে। গত সপ্তাহে বগুড়া জেলার সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি কমিটিও হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রমৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অনেকেই ভিন্নমত অবলম্বনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়, দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে আর ১৪ দল ও সরকার নয়, পার্টির স্বাধীন ভূমিকা নিতে হবে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সব প্রকার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে তিনটি বাম দল মিলে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করা হয়েছিল। একসময় চীনপন্থী ধারায় সংগঠন করা নেতারাই এখন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন। ফলে দলটির মধ্যে বরাবরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করে ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে বিরোধ ছিল। এবার এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বিমল বিশ্বাস ও ইকবাল কবির জাহিদ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেও সংসদ সদস্য হতে পারেননি। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট থেকে বেরিয়ে আসতে তারা তৎপর হয়েছেন। দলের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হওয়ায় আসছে কাউন্সিলে দলে ভাঙন ঠেকাতে সরকারের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন রাশেদ খান মেনন। সম্প্রতি দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মেনন এমন সমালোচনা করেন।

অপরদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেয়া বক্তব্যের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা মেনন যে ব্যাখা দিয়েছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ১৪ দল। ফলে মেননের বক্তব্য যে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

সোমবার মোহাম্মদ নাসিমের ধানমন্ডির বাসায় ১৪ দলের এক আলোচনা সভা শেষে তিনি বলেন, ১৪ দলের দেয়া চিঠির জবাবে গত নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যের জন্য রাশেদ খান মেনন দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলের যে বিশ্লেষণ তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। আমরা মেননকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবো বলেও যোগ করেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

টিএস/বিএস 
 

আরও পড়ুন