• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম

ভৈরবে ১ বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে ১শ ২০ জনের মৃত্যু!

ভৈরবে ১ বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে ১শ ২০ জনের মৃত্যু!
ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন লাইন পার হচ্ছেন পথচারীরা। ছবি- জাগরণ

 

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে অনেক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ভৈরব-টঙ্গী, ভৈরব-সরারচর রেলপথে ১২ মাসে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে নারী-পুরুষ-শিশুসহ ১২০ জন মারা গেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, (ঢাকা-চট্টগ্রাম) ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন হইতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন জং পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ কি.মি. রেলপথের মধ্যে ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের সীমানা ভৈরব রেলওয়ে জং হতে টঙ্গী রেলওয়ে জং স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কি.মি.।

আবার ভৈরব রেলওয়ে জং স্টেশন হতে ময়মনসিংহ রেল স্টেশন পর্যন্ত (ভৈরব-ময়মনসিংহ) প্রায় ১১৫ কি.মি.। এর মধ্যে ভৈরব রেলওয়ে জং থেকে সরারচর রেলওয়ে জং (ভৈরব-সরারচর) স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি.মি. এবং ভৈরব রেলওয়ে জং স্টেশন হতে মেঘনা নদীর উপর রেলসেতু পর্যন্ত ১ কি.মি. রেলপথ। সবমিলিয়ে প্রায় ৯১ কি.মি. রেলওয়ে স্টেশন, রেললাইন এবং ট্রেনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার সংক্রান্ত যাবতীয় দেখার দ্বায়িত্ব ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের। 

৯১ কি.মি. এর মধ্যে গত ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি মাস হইতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ ও শিশু মিলে মোট ১২০ জন ট্রেনে কাটা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতদের অধিকাংশই অজ্ঞাত। ভৈরব-টঙ্গী, ভৈরব-সরারচর রেল পথে গত ১২ মাসে বিভিন্ন এলাকায় অসতর্কতার কারণে উল্লেখিতরা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। নিহতদের মধ্যে ৮৯ জন পুরুষ এবং ৩১ জন মহিলা।

ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত যারা মারা গেছে তারা চলন্ত ট্রেনে উঠানামা, রেলপথ পারপার, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রী, দুই বগির সংযোগ স্থলে বসে যাতায়াত কিংবা ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলন্ত অবস্থায় যাতায়াতকালে অসাবধানতাবশত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে এ সকল মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকলেও  এই সব স্টেশন থেকে বিশেষ করে লোকাল ও মেইল ট্রেনের যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় ফলে রেলপথের ট্রেনে কাটা পড়ে এসকল মৃত্যু।

ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সদ্য যোগদানকারী স্টেশন  মাস্টার এটিএম কামরুজ্জামান জানান, বিরতিহীন ট্রেন আসার মুহুর্তে স্টেশনে মাইকিং করে জানানো হয় যাতে করে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। রেললাইন পারাপারের সময় যাতে ওভারব্রিজ ব্যবহার করে। তাছাড়াও দেখা যায়, অনেক সময় বিরতিহীন ট্রেন থেকে অনেক যাত্রী স্টেশনে নেমে থাকেন। বিরতিহীন ট্রেন থেকে চলন্ত অবস্থায় নামতে গিয়েও অনেক যাত্রী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা গেছে। রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ সব সময়ই যাত্রীদের নিরাপদের জন্য সতর্কতামূলক প্রচারণা করে থাকে।

ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের (এবিআর) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে, কিংবা দুই বগির সংযোগস্থলে বসে যাত্রীরা ভ্রমণ না করে সেজন্য আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। ট্রেন আসার আগ মুহুর্তে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাইরেন বাজিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করে দেয় যে ট্রেন আসতেছে। যাত্রীরা সতর্কতা অবলম্বন না করে ট্রেনে ভ্রমণ করার ফলে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে।

অফিসার ইনচার্জ ভৈরব রেলওয়ে থানা মো. আব্দুল মজিদ জানান, রেলওয়ে পুলিশ ট্রেনে ঝুঁকিপূর্ণ রেল ভ্রমণের দায়ে আর্থিক জরিমানা করে আদালতে সোপর্দ করা হলেও তারা পুনরায় ঐ পথই বেছে নেয়।
এসব দুর্ঘটনা এড়াতে চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা ত্যাগ এবং স্টেশনে স্টপেজ নেই এমন ট্রেনে ভ্রমণ না করাসহ ওভারব্রিজ ব্যবহার করা হলে ওই সকল অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। ট্রেনের বগির ভিতরে বসে যাতায়াত ব্যতিত ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ অনেকটা রোধ করা গেলেও গত বছর ২০১৮ সালে ১২০টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এবং এই নতুন বছরের ২০১৯ এর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই ২ মাসে ১০ জনের মত ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়। এসকল প্রতিটি অপমৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।
    
 কেএসটি