• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০১৯, ০৯:৪০ এএম

প্রতিবন্ধী মিতুর আঁকানো ছবি কথা বলে

প্রতিবন্ধী মিতুর আঁকানো ছবি কথা বলে
মিতুর আঁকানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার- ছবি: জাগরণ

 

জন্ম থেকেই বাক প্রতিবন্ধী মিতু রানী দাস (১৪)। নিজে কথা বলতে না পারলেও, তার আঁকা ছবি যেন কথা বলে। অংকনের ওপর তার নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। কিন্তু শুধুমাত্র চোখের দেখায় অবলীলায় আঁকতে পারে নানা ধরনের ছবি। তার চোখের দেখা আর হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে মানুষ, প্রকৃতিসহ নানা ধর্মের ছবি। গ্রামে বাক প্রতিবন্ধী মেয়ের আঁকা ছবি দেখে অবাক সবাই। অসাধারণ এই প্রতিভাকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচর্যার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান -ছবি: জাগরণ

পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধুলাউড়ি ঘোষপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক কুটিশ্বর দাস ও সুমিত্রা রানী দাস দম্পতির ছোট মেয়ে মিতু রানী দাস। জন্ম থেকেই বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার কথা বলার ভাষা নেই। তবে ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি প্রবল ঝোঁক তার। ছবি দেখে আঁকতে পারে হুবুহু আরেকটি ছবি। যে ছবি দেখে অবাক হতে হয় সবাইকে। তার চোখের দেখা আর হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে মানুষ, প্রকৃতি, ফুল, পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের ছবি। সংসারে অভাব থাকলেও মেয়ের এমন আগ্রহ ও প্রতিভার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াননি বাবা-মা। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় আইসিটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয় মিতু। তবে এবছর সেই অকৃতকার্য হওয়া বিষয়ে আবারও পরীক্ষা দিয়েছে সে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ছবি: জাগরণ

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উঠানে বসে আর্ট পেপারে ছবি আঁকছে মিতু। কথা বলার প্রবল আকুতি তার। তার বোঝানোর ক্ষমতা বা দক্ষতা সাধারণ অন্য মেয়েদের চেয়েও বেশি। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ছবি দেখে নিজে নিজেই আঁকা শেখে মিতু। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট মিতু। বড় বোন রেপা রানী দাসও বাকপ্রতিবন্ধী। অনেক কষ্টে তার বিয়ে দিয়েছেন বাবা-মা। মেজ বোন রিতা মাস্টার্স পাস করার পর বিয়ে হয়। বড় ভাই রিপন কুমার দাস ঢাকার একটি কলেজে পড়াশোনা করে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত কুটিশ্বর দাস শত কষ্টের মাঝে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন।

বাবা কুটিশ্বর ও মা সুমিত্রা রানী দাস এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বড় মেয়ের পর ছোট মেয়েও (মিতু) বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু বড় হওয়ার পর তাকে (মিতু) স্কুলে ভর্তি করে দেই। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মিতু ছবি দেখে হুবহু আঁকতে শুরু করে। ভেবেছিলাম প্রাইমারি পাস করলে আর পড়াবো না। কিন্তু মেয়ের প্রবল আগ্রহ দেখে বাধা দেইনি।’ 

বাকপ্রতিবন্ধী মিতু -ছবি:জাগরণ

চাটমোহর শিল্পকলা একাডেমির অংকন শিক্ষক মানিক দাস বলেন, ‘বাকপ্রতিবন্ধী মিতুর আঁকানো চিত্রকর্ম দেখে আশ্চর্য হয়েছি। এটা ঈশ্বর প্রদত্ত ব্যাপার। না শিখেই মিতুর মধ্যে যে প্রতিভা আছে এর আগে কোথাও দেখিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিতু অনেক দূর পৌঁছাবে।’

এদিকে, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার। ইউএনও এ প্রতিবেদককে বলেন, খবর পেয়ে আমি মিতুর বাড়িতে গিয়ে তার ছবি আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তাই মিতুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে তাকে অংকন শেখানো ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছি। সেই সাথে তাকে একটি ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করছি, মিতু আরো এগিয়ে যাবে অনেকদূর।


কেএসটি