• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২২, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম

ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত কক্ষেই পাঠদান 

ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত কক্ষেই পাঠদান 

দূর থেকে দেখলে মনে হবে ফাঁকা মাঠের মধ্যে রাস্তার পাশে হয়তো বা কোন সাপ্তাহিক হাট বসার জায়গা। যেখানে সপ্তাহে একদিন কিংবা দুই দিন হয়তো হাট বসে। গাছের নিচে ইটের পুরাতন কক্ষের প্রাচীর কোথাও ভেঙে গেছে- আবার টিনের ছাউনির কোথাও টিন উড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু এটি একটি বিদ্যাপিঠ। এটি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার একটি আদর্শ বিদ্যাপিঠ মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে আগামীর প্রজন্মরা বিদ্যা গ্রহণ করে। বিদ্যালয়টিতে ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কোন নিরাপত্তা প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয়ের সব কিছুই থাকে নিরাপত্তাহীনতায়।

পরিত্যক্ত ভবনগুলো যে কোন সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল। পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ না থাকার কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত কক্ষেই পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বার বার অবগত করেও কোন কাজ হয়নি বলে জানান, শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর জানান, ১৯৯৭সালে এই অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী কজন ব্যক্তিদের চেষ্টায় এই বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু। সেই সময়ে এখানে ইট ও টিনের ছাউনি দিয়ে ৪টি কক্ষ তৈরি করে শুরু করা হয় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ফলাফলে কোন ফেল নেই এবং প্রতিবছর এই বিদ্যালয় থেকে একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে থাকে। অবহেলিত এই অঞ্চলে অনেক বছর জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসলেও এখনো এই বিদ্যাপিঠটিতে আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে এই বিদ্যাপিঠ নানা সমস্যায় জর্জড়িত। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্ষ সংকট। কক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত কক্ষেই গাদাগাদি করে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে একটি একতলা ভবন পেলেও দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় তার অবস্থাও বর্তমানে খুবই নাজুক। বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করছে। বিজ্ঞানাগার না থাকার কারণে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বৈজ্ঞানিক উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের জন্য নেই আলাদা কক্ষ। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। 

এছাড়াও ঝড়ের মৌসুমে আমরা থাকি চরম নিরাপত্তাহীনতায়। কারণ কখন ঝড় এসে কক্ষের টিনের ছাউনি উড়ে নিয়ে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ঝড়ে পরিত্যক্ত মাটির ভবনের টিনগুলো উড়ে যাওয়ায় বার বার বিপাকে পড়তে হয়। 

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রবীন শিক্ষক শুকবর আলী বলেন, আমরা অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর এই সমস্যার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফল পাওয়া যায়নি। যদি এই পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙে সম্প্রসারণ করে আধুনিক মানের ভবন নির্মাণ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে একটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করতে পারবে। ফলে এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার মানুষের মাঝে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং ঝরে পড়া অনেক কমে যাবে ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, এই বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের সমস্যা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। আশা করি এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। 

কেএসটি