• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০১৯, ১২:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৭, ২০১৯, ১২:০৩ পিএম

নওগাঁয় ৬৭টি গণকবর চিহ্নিত

নওগাঁয় ৬৭টি গণকবর চিহ্নিত

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সারা দেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করে গণকবর দেয়। নির্মম সেই সব গণহত্যার সাক্ষী পুরো দেশ। ১৯৭১ সালে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে গতহত্যার ইতিহাস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করছে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ। সংগঠনটির কর্মীরা এ পর্যন্ত নথিবদ্ধ করেছেন জেলার ৬৭টি গণহত্যার বিবরণ। 

একুশে পরিষদের কর্মীদের নিজস্ব অনুসন্ধানে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত আর ভাষ্য নিয়ে 'গণহত্যা ১৯৭১ : নওগাঁ' শিরোনামে একটি গ্রন্থের সম্পাদনার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১৯ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে বলে একুশে পরিষদ সূত্রে জানা গেছে। 

একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। নয় মাসের যুদ্ধে পুরো বাংলাদেশ ছিল যেন বধ্যভূমি। পাকিস্তানি সেনা আর তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা নিরস্ত্র বাঙালিকে যেখানে-যেভাবে পেরেছে হত্যা করেছে। কোথাও কি লেখা হয়েছে সেই শহীদদের নাম, তাদের আত্মত্যাগের বিবরণ? নিঃসন্দেহে, কাজটা বেশ কষ্টসাধ্য। ২০১০ সালে প্রায় অসম্ভব সেই কাজটাতেই হাত দেয় একুশে পরিষদ নওগাঁর কর্মীরা। জ্ঞানে-অজ্ঞানে ঝাপসা হয়ে আসা বা ঝাপসা করে দেওয়া অধ্যায়গুলোকে একে একে তুলে ধরছে সাধারণ মানুষের কাছে, নতুন প্রজন্মের কাছে। 

সংগঠনের সভাপতি ডিএম আবদুল বারী জানান, নওগাঁয় এখন পর্যন্ত ৬৭টি বধ্যভূমি বা গণহত্যার স্থান তারা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এখনও প্রামাণ্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে। শুধু বধ্যভূমির স্থান চিহ্নিত করেই তারা কাজ শেষ করছে না, গণহত্যার তারিখে ওই স্থানে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আলোচনা, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে একুশে পরিষদ স্থানটিকে এলাকাবাসী এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে। 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন বাঙালির সবচেয়ে গর্বের ইতিহাস। গৌরবজ্জ্বল সেই ইতিহাসের স্বাক্ষী দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য গণকবর। মুক্তিযুদ্ধে সময় সংগঠিত গণহত্যার অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখনও চিহ্নিত হয়নি। তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা থেকেই ২০১০ সাল থেকে একুশে পরিষদ নওগাঁর জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন গণকবরগুলো চিহ্নিত করা এবং ওই সব স্থানে গণহত্যা দিবস পালনের কাজ শুরু করে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেহমুদ মোস্তফা রাসেল শোনালেন তাদের মাঠের কাজের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমাদের কাজটি করতে হয়েছে এবং এখনও করে যাচ্ছি। প্রথমত, ১৯৭১-এর ঘটনার সাক্ষী ছিলেন যারা, তাদের অনেকেই আর বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন সময়ের প্রবাহে ও বয়সের ভারে অনেক কিছুই ভুলে গেছেন। দ্বিতীয়ত, অনেকেই ইচ্ছা করে বা অজ্ঞতায় ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। যেমন নওগাঁর পত্মীতলার হালিমনগর গণহত্যার কথাই যদি ধরি, ২০০১ সালের দিকে পত্মীতলার স্থানীয় সংবাদিকদের লেখালেখির সূত্র ধরে আমরা অনুসন্ধান শুরু করি। এ সময় কিছু লোক আমাদের জানায়, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমরা ফিরে আসি। শেষে ২০১১ সালে আমরা খুঁজে পাই সেই গণহত্যার ঘটনায় আহত গুলু মুর্মুকে। তার সূত্র ধরে দেখা মেলে ওখানে যাদেরকে দিয়ে লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেই আমিনুল, সাইফুল প্রমুখকে। 

তাদের বর্ণনায়, ১৯৭১ সালে পত্মীতলার নির্মইল ইউনিয়নের হালিমনগর গ্রামে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল তাতে ২০ জন আদিবাসীসহ অন্তত ৫০ জন শহীদ হন। ২০ জন আদিবাসীর পরিচয় উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি, কারণ তারা ছিল ভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটতে আসা মানুষ এবং সাঁওতালপল্লীতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা।’ 

একুশে পরিষদ এই প্রয়াস সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হারুন-অল-রশিদ বলেন, একুশে পরিষদ যে কাজ করছে নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু গণকবরগুলো শুধু চিহ্নিত করলেই হবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও অনেক গণকবরই সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এগুলো সংরক্ষণ করা প্রশাসনের দায়িত্ব।’


কেএসটি