• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৮:৪১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৮:৫০ পিএম

খাদ্য সহায়তা না পেয়ে অভয়াশ্রমে মাছ শিকার

খাদ্য সহায়তা না পেয়ে অভয়াশ্রমে মাছ শিকার

লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ দুই মাস বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেয়ার কথা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের এক মাস পেরিয়ে গেলেও জেলেরা কোনো সহায়তা পাননি। তাছাড়া নিবন্ধিত জেলের তালিকায়ও রয়েছে নানা অসংগতি। অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত জেলেদের বঞ্চিত করে ব্যবসায়ী, কৃষক ও রাজনৈতিক নেতাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ফলে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করছেন জেলেরা।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ৬২ হাজারের বেশি জেলে রয়েছে। তবে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৫০ হাজার ২৫২ জন। এর মধ্যে আইডি কার্ড রয়েছে ৪২ হাজার ৩২৬ জনের। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলার ২৫ হাজার ৯৪৭ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল দেয়া হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের এক মাস পার হয়ে গেলেও অধিকাংশ জেলে প্রতিশ্রুত খাদ্য সহায়তা পাননি। কোনো কোনো ইউনিয়নে এখনো খাদ্য বিতরণ শুরুই হয়নি।
 
এদিকে বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে জেলে পরিবারগুলো। তারা বাধ্য হয়েই জীবিকার তাগিদে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন। আবার অনেকে প্রশাসনের অভিযানে ধরা পড়ে জরিমানা দিচ্ছেন বা জেল খাটছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা তদারকিতে গত এক মাসে ৪৯ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগে ২৬ জন জেলেকে গ্রেফতার, ২৭টি মামলা ও ৮৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ১৪ লাখ মিটার কারেন্ট জাল ও ১৫৪ মিটার সাধারণ জাল জব্দ করা হয়েছে।

সরেজমিন কমলনগরের মতিরহাট মাছঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে কোনো মাছ বেচা-বিক্রি হচ্ছে না। তবে ঘাট থেকে একটু পশ্চিমে সুপারি বাগানে ঠিকই মাছ বেচাকেনা চলছে। একই অবস্থা মাতাব্বার হাট, রামগতি আলেকজান্ডারে। এছাড়াও রায়পুর উপজেলার পুরানো বেড়ি, খাসের হাট বাজার, চরলক্ষ্মী, পানির ঘাট, প্রধানিয়া ঘাট, জালিয়ার চর, চর আবাবিল, চরভৈরবী, কাটাখালসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধে জাটকা ইলিশ শিকার ও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জেলেরা জানান, সরকারি নির্দেশনার জন্য অপেক্ষায় থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে চাল বিতরণের কথা থাকলেও এখনো তারা তা পাননি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন অভয়াশ্রম থেকে জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় তাদের ৪ হাজার ১৫১ দশমিক ৫২০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদরে ৫৩৫ দশমিক ২০০ টন, রায়পুরে ৬৭১ দশমিক ৩৬০ টন, রামগতিতে ১ হাজার ৮০২ টন ও কমলনগরে ১ হাজার ১৪২ দশমিক ৫৬০ টন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে জেলে পরিবারের মাঝে এসব চাল বণ্টন করার কথা।

চরকালকিনী ইউপির চেয়ারম্যান মো. ছায়েফ উল্যা জানান, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনি ঝামেলার কারণে ভিজিএফ চাল আনা হয়নি। এ কারণে কোনো জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি। আশা করি, আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু করা হবে।

কমলনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হোসেন জানান, সহায়তা না পেলে জেলেরা মাছ শিকারে নামবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। মৎস বিভাগ ও কোস্টগার্ডকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে কেউ যেন নদীতে নামতে না পারে। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানদের দ্রুত ভিজিএফের চাল বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নে ব্যবসায়ী স্বপন ও সাবেক ইউপি সদস্য লিয়াকতসহ কয়েকজন জেলে না হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে ভিজিএফের চাল দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে চররুহিতা ইউপির চেয়ারম্যান কবির পাটোয়ারী জানান, জেলেদের তালিকা আমরা করিনি। ৮-১০ বছর আগে সরকারিভাবে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ইউনিয়নে জেলের তালিকায় ২৭০ জনের নাম আছে। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত সবাইকে এ সহায়তার আওতায় আনা হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা এইচএম মহিব উল্লাহ জানান, গতবারের চেয়েও এবারের অভিযান বেশি সফল হতে চলেছে। জেলেরাও সচেতন হচ্ছেন। প্রশাসন, মৎস বিভাগ ও কোস্টগার্ড তৎপর রয়েছে। কিছু জেলে নদীতে নামছেন, তাও বন্ধ করা হবে। প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের সহায়তা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পূর্বে জেলেদের যে তালিকা করা হয়েছে, তা আর সংশোধন করা হয়নি। যার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি পেলে তা সংশোধন করা হবে।


এসসি/