নদীর এক পাড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর সেই বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন থাকেন নদীর অন্যপাড়ে শহরে। নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয় যেতে তার অনিহা। মাসে ২/৩ দিন বিদ্যালয়ে যান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল থেকে শহরে ফিরে আসেন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনার বুকে জেগে উঠা চর আবদুল্ল্যাহ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে একটি গ্রামের নাম তেলির চর। চরের জনতা বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত চর সেবেজ আলোচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। বিদ্যালয়ের আশেপাশে প্রায় ২০০ পরিবার বাস করেন। ওই সব পরিবারের কয়েকশ শিশুর একমাত্র জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম এই বিদ্যালয়টি। কিন্তু এখানে একজন মাত্র সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। এতে করে শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যায়। পরে জনতা বাজারে ১২০১৮ সালে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। এ বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। তার নাম মো. জসিম। থাকেন উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে। বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় তিনি দায়িত্ব পালন ছাড়াই বেতন ভাতা নিয়েছেন। বিদ্যালয়টি আবার চালু হলে তিনি বদলির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেন নি। ফলে তিনি নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয় যেতে নারাজ। এখন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা অতিথি শিক্ষিক মো. আবদুর রহমান।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিয়মিত স্কুলে আসলেও জসিম স্যার আসেন না। গত চার মাসে স্যার আসছেন মাত্র ৮/৯দিন। কিন্তু স্কুল ছুটির আগেই তিনি চলে গেছেন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ও যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নিয়মিত না আসায় তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে।
অভিভাবকরা জানান, যাতায়াতের অসুবিধার কারণে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবুও তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। তিনি থাকেন উপজেলা সদর আলেকজান্ডার শহরে।
অতিথি শিক্ষক আবদুর রহমান জানান, লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমানের প্রচেষ্টায় জনতা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক। নদী ভাঙনের কারণে চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে এখানে স্থানান্তরিত হয়। আমি এতে অতিথি শিক্ষক হিসাবে পাঠদান করিয়ে আসছি।
চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জসিম উদ্দিন জানান, বিদ্যালয় যেতে সকাল ৭টায় আলেকজান্ডার থেকে নৌকায় উঠতে হয়। যেতে লাগে তিন ঘন্টা। ওই পথে পারাপারে একটিমাত্র নৌকা থাকায় সেটা ফের দুপুর ১২ টায়। ফলে বাড়ি ফেরার জন্য তাকে ওই নৌকা ধরতে হয়। এতে করে তার পক্ষে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় না। আবার বিদ্যালয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরতে হয়।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ ও রামগতি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম এহছানুল হক চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রফিকুল হক জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও শিক্ষক সংকটের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসসি/