• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০১৯, ০৮:৪৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৬, ২০১৯, ০২:৪৭ পিএম

ইছামতিই সম্বল দেবহাটার ছখিনার 

ইছামতিই সম্বল দেবহাটার ছখিনার 
এভাবেই জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করেন ছখিনা

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণনাংলা গ্রামের মৃত আকবর আলীর স্ত্রী ছখিনা খাতুন।তিনি টানা ৩৯ বছর ধরে চোখের জলে স্বপ্ন ভাসিয়ে সীমান্ত নদী ইছামতির জলে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। স্বামীর মৃত্যুতে কপাল ভাঙলেও মন ভাঙেনি তার। ওপারে ভারত,এপারে বাংলাদেশ। মাঝখানে ইছামতি। ওপারের উলুর ধ্বনি এপারে আসে। এপারের আযানের ধ্বনি ওপারে যায়। ওপারের পাখি এপারে, এপারের পাখি ওপারে যায়। একই নদীর এ কূলের মাছ যায় ও কূলে আবার ও কূলের মাছ আসে এ কূলে। কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করলেই এভাবে একূল ওকূল করতে পারে না। আর এভাবে একমনে ঠেলা জাল ঠেলে যায় সখিনা। বয়স তার ৫০ এর কাছাকাছি। সেই ১০/১১ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। জীবনের সঙ্গে হার না মানা অবিরাম সে সংগ্রাম। 

সরেজমিনে গেলে ছখিনা খাতুন বলেন- ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরেই তার জীবন অতিবাহিত করছে। এই মাছ ধরেই চলে তার সংসার। এমনকি এই আয় দিয়েই তার একমাত্র অনার্স পড়ুয়া ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। 

তিনি আরো বলেন, তিনি অত্যন্ত গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছোট। অভাবের সংসারে বাবা মায়ের অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে বেশিদূর পড়াশুনা করা সম্ভব হয়নি তার। যার কারণে তিনি ১০/১১ বছর বয়স থেকে নদীতে জাল টেনে রেণুপোনা ধরা শুরু করেন। রেণুপোনা ধরে তিনি দিনে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা আয় করতেন। ঐ রেণুপোনাগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে বিভিন্ন মৎস্য ঘেরে বিক্রয় করতেন। সেখান থেকেই তার নদীর সঙ্গেই জীবনের মিতালি।
 
পরে তার পিতা-মাতা একই গ্রামের আকবর আলীর সঙ্গে তার বিবাহ দেন। তার ১৭ বছর বৈবাহিক জীবনে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আদর করে তার নাম রাখা হয় আনোয়ার হোসেন। কিন্তু তিনি জাল টেনে মাছ ধরা বন্ধ করেননি। আবারো তার জীবনে দুর্বিসহ অবস্থা নেমে আসে। সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু নদীতে মাছ ধরেই তার কোনরকমে সংসারটি চলতে থাকে। জীবনের প্রয়োজনে তিনি আর পিছু ফিরে তাকাননি। নদীর সঙ্গে তার জীবনের গভীর সম্পর্ক হয়ে যায়। ভোর বেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত, আবার কোন কোন সময় দুপুরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরেন।

ছখিনা আরো জানান-শুধু তিনিই নন,এই নদীতে মাছ ধরে তার এলাকার এবং আশেপাশের এলাকার অনেক নারী ও পুরুষ। এই নদীর সঙ্গে মিশে আছে তাদের ভাল মন্দ, সুখ দুঃখ, মান-অভিমান। সংসার ও দৈনন্দিন কাজ কর্ম শেষে যখন বিশ্রাম নেয় তখন একটি গানের সুর মনে পড়ে তার। ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু।

বিএস