• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৮:২১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৮:২১ এএম

৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি রমা কৃষ্ণ 

৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি রমা কৃষ্ণ 
শিকলবন্দি রাম কৃষ্ণ সাহা- ছবি : জাগরণ

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকায় পাগল আখ্যা দিয়ে রাম কৃষ্ণ সাহা (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে ৩০ বছর ধরে একটি ঘরে শিকলবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য এমনই একটি অমানবিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে পরিবারের স্বজনরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মিরকাদিমের দুধপট্রি এলাকার স্বর্গীয় গৌরাঙ্গ সাহার পুত্র রাম কৃষ্ণ সাহা ওরফে রমা (৫৫) কে তার আপন ছোট ভাই গনাই সাহা ৩০ বছর আগে ঘরের মধ্যে শিকলবন্দি করে রাখে। পাঁচ বছর পূর্বে গনাই সাহা মারা যায়। তবুও শিকল মুক্ত হতে পারেনি  রাম কৃষ্ণ ওরফে রমা সাহা। গনাই সাহার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মনি রানী সাহা ও তার সন্তানরা এখন রমাকে একটা ছোট অন্ধকার কুঁকড়ি ঘরে শিকলবন্দি করে রেখেছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোচালা একটি ছোট্ট টিনের ঘরে শিকলবন্দি অবস্থায় একটি কাঠের চৌকিতে বসে আছে রাম কৃষ্ণ সাহা। তার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ ও মুক্ত হবার আকুতি। তার সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, বরিশাল থেকে চাল, ডাল এনে মিরকাদিম বন্দরে বিক্রি করতাম। ব্যবসাও ভালো চলছিল। নিয়মিত তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তিনি আরো বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি একা ভোগ করার জন্য ছোট ভাই আমাকে শিকলবন্দি করে রখেছে। বিয়ে করিনি, সংসার নেই আমার। আমার সম্পদ নিবে নিয়ে যাক এভাবে আমাকে আটকে রেখেছে কেন? আমাকে ছেড়ে দেক আমি কাজ করে নিজের পেট চালাবো। 

যে ঘরে রাম কৃষ্ণকে শিকলবন্দি রাখা হয়েছে আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ঘরটিতে নেই কোন বিদ্যুৎ, চারদিকে দুর্গন্ধ।  ড্রামের মধ্যে ময়লা আবর্জনা যুক্ত পানি রাখা। কখনো কখনো এই পানিই পান করেন তিনি। খাবার মিলে দিনে ২ বার, স্থানীয়রাও মাঝে মাঝে তাকে খাবার দেয়। দীর্ঘদিন বন্দি থাকার কারণে তাকে কিছুটা অস্বাভাবিক লাগে। এভাবে ৩০ বছর ধরেই চলছে রমা সাহার বন্দি জীবন। যুবক অবস্থায় বন্দিদশার কারণে বিবাহ করতে পারেনি তিনি। পরিবারের লোকজন তাকে পাগল দাবি করে শিকলবন্দি রাখলেও কোনদিন তাকে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা নেয়নি । 

শিকলবন্দি রাখার বিষয়টি স্বীকার করে গনাই শাহার স্ত্রী মনিরানী শাহা দাবি করেন, ৩০ বছর আগে বরিশাল ব্যবসা করতে গিয়েছিল তখন তাকে কারা যেন ব্যাপক মারধর করে। সেই থেকে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে এবং পাগলামী করতে থাকে। তারপর থেকে তাকে আটকে রাখা হয়। তাকে কোন মানসিক চিকিৎসা করানো হয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরানী সাহা বলেন, তাকে আজ পর্যন্ত কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বর্তমানে তিনি এখন অনেকটা সুস্থ আছেন। তিনি আশঙ্কা করেন, তাকে ছেড়ে দিলে এলাকার লোকদের মারধর করতে পারেন তাই বাধ্য হয়ে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। 

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা একটা অমানবিক ঘটনা। একজন সুস্থ মানুষকেও যদি এভাবে শিকলবন্দি রাখা হয় তাহলে সে পাগল হয়ে যাবে।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর আলম আভিযোগ করে বলেন, লোকটা শিক্ষিত তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য তাকে পাগল বানিয়ে রেখেছে ছোট ভাই গনাই সাহা, তার স্ত্রী ও সন্তানরা। দ্রুত তাকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আহাম্মেদ বলেন, বিষয়টি জানলাম খুব অমানবিক। আমি দ্রুত খোঁজ নিয়ে দেখবো। এমন হয়ে থাকলে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পাশাপাশি তার পুনর্বাসন করার যাবতীয় ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।

কেএসটি