• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০১৯, ০১:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৬, ২০১৯, ০১:০৭ পিএম

জন্মদিনের কথা মনে না রাখায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা

জন্মদিনের কথা মনে না রাখায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা

‘জন্মদিন’ কথাটি ছোট্ট হলেও এর গভীরতা বিশাল। আর এই জন্মদিনের কথা মনে না থাকায় সিরাজগঞ্জে বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে প্রিয়াঙ্কা সাহা নামে এক শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন।

মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, ‘তোমরা আমার বাবা-মা, আর তোমরাই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলে! এটাই ছিল বাবা-মার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার শেষ কথা। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে পৌর এলাকার গোশলার নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রিয়াঙ্কা সাহা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গোশলা রোডের বলরাম সাহার মেয়ে। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন।

নিহত প্রিয়াঙ্কা সাহার বাবা বলরাম সাহা ও মা বন্দনা সাহা জানান, সোমবার (২২ এপ্রিল) ছিল প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন। ওই দিন বিকালে সে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পর দুপুরের খাবার খেয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে মোবাইলে জন্মদিন নিয়ে কথা বলছিল। পরে মেয়ের কাছ থেকে নিশ্চিত হই সোমবার তার জন্মদিন। এ সময় প্রিয়াঙ্কা আমাদের উদ্দেশ করে বলে, তোমরা আমার বাবা-মা, আর তোমরাই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলে! তবে এ মন্তব্য করার পরও সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছিল। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রিয়াঙ্কার শোবার ঘরের পাশে অন্য একটি রুমে শুতে যায়। কিছুক্ষণ পর মা বন্দনা সাহা প্রিয়াঙ্কাকে রাতের খাবার খেতে ডাকাডাকি করেন। এ সময় তার কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি ছোট মেয়ে ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী অন্তরা সাহাকে বিষয়টি জানান। অন্তরা তার বোনকে মোবাইল করলেও তা রিসিভ করেনি। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৮টার দিকে নাস্তা করার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে ডাকাডাকি করে। কিন্তু তার কোনো সাড়া পান না। পরে তাদের সন্দেহ হলে প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। এ সময় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো প্রিয়াঙ্কার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠান। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন রাতেই ঘুড়কা মহাশ্মশান ঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রিয়াঙ্কার বড় বোন ও সিরাজগঞ্জ কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা বর্ণালী সাহা জানান, প্রিয়াঙ্কা লেখাপড়ায় ছিল বেশ ভালো। নাট্যজগৎসহ সাংস্কৃতিক জগতে ছিল তার বিচরণ। তবে কোথাও গেলে বাবা-মা অথবা বোনদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতো। একা কোথাও যেত না। তিন বোনের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা ছিল মেঝো। এ বছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলা বিষয়ে ফার্স্টক্লাস পেয়ে মাস্টার্স পাস করে। পরীক্ষা শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে সিরাজগঞ্জে চলে আসে। প্রায় আড়াই মাস আগে শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি হয় সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

তিনি আরও জানান, আমরা তিন বোন নিজেদের মধ্যে ছিলাম বেশ খোলামেলা। নিজেদের ভালোমন্দ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হতো। আমাদের বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ। প্রিয়াঙ্কার একটাই ভাবনা ছিল কি করে অসুস্থ বাবা-মাকে ভালো রাখা যায়। সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কার মতামত নিয়েই পরিবার থেকে ওর বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছিল। ও শুধু বলতো ভালো ঘরে বিয়ে দিও। যেন অসুস্থ বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারি। এ সময় তিনি এ ঘটনার সঙ্গে প্রেম সংক্রান্ত কোনো বিষয় জড়িত নয় বলে দাবি করেন। তবে স্বভাবগতভাবে প্রিয়াঙ্কা ছিল অভিমানী, জেদি ও রাগী। কী কারণে পরিবারের সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে এভাবে চলে গেলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এসসি/