• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০১৯, ০৯:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৭, ২০১৯, ০৪:১২ পিএম

নওগাঁয় শতাধিক বিঘা জমিতে ধানের বদলে মরা শীষ

নওগাঁয় শতাধিক বিঘা জমিতে ধানের বদলে মরা শীষ
নওগাঁয় শতাধিক বিঘা জমিতে ধানের শীষে চিটা -ছবি : জাগরণ

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় বিএডিসির ব্রি-ধান ৬৩ জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়েছেন। মাঠে মাঠে এই জাতের ধান দেখে পাকা ধানের ক্ষেত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ধানের ভিতরে কোন চাউল নেই। শীষে শীষে কেবলই চিটা। এক মুঠো ধান ঘরে তুলতে না পারার আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষকরা। 

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মৈনম ও কশব ইউনিয়নসহ আশের পাশের বিস্তীর্ন এলাকার কৃষকরা চলতি বোরো মওসুমে বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহ করে তাদের জমিতে ব্রি-ধান ৬৩ জাতের ধান রোপণ করেন। ধানের গাছ বেশ ভালোই হয়েছিল। দেখে মনে হয়েছিল ফলনও ভালো হবে। কিন্তু যখন শীষ বের হতে থাকে তখন কৃষকদের চক্ষু ছানাবড়া। ধানের মধ্যে কোন দুধ নেই। পরবর্তীতে শুধুই চিটা। কোন ধানের মধ্যে চাল নেই। প্রতিটি ধানের গাছে শীষে কেবল চিটা আর চিটা। একটি ধানের মধ্যে কোন চালে নেই। হাজার হাজার টাকা খরচ করে ধান উৎপাদন করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। খরচের টাকা কোথা থেকে তুলবেন আর ছেলে মেয়ে নিয়ে সারা বছর খাবেন কি এই দুশ্চিন্তায় তাদের চোখে ঘুম নেই। তাই মাঠে মাঠে কৃষকের আহাজারি।

 

মান্দা মৈনম গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ধানের শীষে চিটা দেখে তারা বার বার কৃষি বিভাগের নিকট যোগাযোগ করে পরামর্শ চান। কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কিন্তু কোন পরামর্শই কাজে আসেনি। এখন আমরা চোখে অন্ধকার দেখছি। কি করে সংসার চালাবো। বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটাবো। বিএডিসি কেন আমাদের এই সর্বনাশ করলো?

কশব গ্রামের কৃষক দুলাল বলেন এই এলাকায় যারা বিএডিসি থেকে ব্রি-ধান ৬৩ জাতের ধান চাষ করেছেন তাদের সকলেরই একই অবস্থা। তারা সকলেই বিএডিসি নওগাঁ অফিস থেকেই বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁরাই কেবল ফসল হারিয়ে বর্তমানে সর্বশান্ত হয়েছেন। ধানই আমাদের একমাত্র সম্বল। এখন আমরা কি ভাবে সংসার চালাবো। সন্তানদের পড়ালেখার খরচ কিভাবে দিবো?

নওগাঁ বিএডিসির উপ-সহাকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন এই প্রতিষ্ঠান কেবল বীজের বিক্রয় কেন্দ্র। বিভিন্ন উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে রক্ষাবেক্ষণ এবং যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণের পরই কেবল কৃষকপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে আসলে কি হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা সম্ভব।

মান্দার মৈনম ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উৎসব কুমার হাজরা বলেন কৃষকদের নিকট থেকে জানতে পেরে জমিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেছি। আবহাওয়ার কারণে মাজরা পোকা এবং ব্লাস্ট-এর অক্রমনে এমনটা হতে পারে।
 
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাহবুবার রহমান বলেন মান্দা এলাকায় ধানের এই বিপর্যয়ের কথা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে অবগত হয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। তাদের মতে, বর্তমানের আবহাওয়ায় ধানের এমন অবস্থা হওয়া কথা নয়। গাছ ভালো হয়েছে, এক্ষেত্রে পরাগায়ণের বিভ্রাট হতে পারে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। 

এই এলাকার কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের ঘরেই একমুঠো ধানও উঠবেনা। এই ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা কিভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবে সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি একান্ত অপরিহার্য বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

একেএস