• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৯, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৯, ২০১৯, ০৩:২৭ পিএম

দশ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে কমেছে ১.৯৮ একর ফসলি জমি

দশ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে কমেছে ১.৯৮ একর ফসলি জমি

নানা কারণে দক্ষিণাঞ্চলে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। বিগত দশ বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে কমে গেছে প্রায় ১ দশমিক ৯৮ একর জমি। বিশেষ করে গত ৫ বছরে কমে যাওয়ার হার পূর্বের পাঁচ বছরের তুলনায় বেশি। ২০১৪ সাল হতে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জমির পরিমাণ কমেছে শূন্য দশমিক ৯৯ একর। সংখ্যায় যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২২৬ একর।

যদিও ফসলি জমির পরিমাণ কমলেও কমেনি উৎপাদন। বরং বিগত ১০ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে চাল, ডাল, সব্জি, ভুট্টাসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে বহুগুন। ফসল ফলাতে উফশী ও হাইব্রিডসহ উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণেই কম জমিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় উদ্যান বিশেষজ্ঞ জিএমএম কবির খান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় খামার বাড়ি সূত্রে জানাগেছে, দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বছর গড়ে দশমিক ২ শতাংশ ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। সে হিসেবে গত ১০ বছরে ১ দশমিক ৯৮ ভাগ ফসলি জমি কমেছে। তবে তুলনামূলক জমির পরিমাণ কমেছে বিগত পাঁচ বছরে। কমে যাওয়া ফসলিম জমির পরিমাণ অন্যান্য জেলার তুলনায় ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় বেশি। বিগত ৫ বছরে এ দুটি জেলায় জমির পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৫০০ একর।

এর মধ্যে ভোলা জেলায় জমির পরিমাণ কমেছে ৬ হাজার ৩০০ একর এবং পটুয়াখালী জেলায় কমেছে ৬ হাজার একর। পাঁচ বছর পূর্বে ২০১৪ সালে ভোলা জেলায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৮২ একর। পাঁচ বছর পরে এসে সেই জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮২ একর। আর পটুয়াখালী জেলায় জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ একর। তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার একরে।

এছাড়া বরিশাল জেলায় ২০১৪ সালে ছিলো ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ একর। যার বর্তমানে পরিমান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩০ একর। কমেছে ৭০ একর। পিরোজপুর জেলায় ছিল ৮২ হাজার ৪১৪ একর। বর্তমান পরিমাণ ৮২ হাজার ৩১৪ একর। কমেছে ১০০ একর।

ঝালকাঠি জেলায় জমির পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ২৫৬ একর। বর্তমানে ফসলি জমির পরিমাণ ৫৪ হাজার ২০০ একর। কমেছে ৫৬ একর। বরগুনা জেলায় জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৬ একর। তা থেকে কমে এসেছে ১ লাখ ২ হাজার ৮৯৬ একরে। বিগত ৫ বছরে ফসলি জমি কমেছে ১০০ একর।

এদিকে, ফসলি জমি’র পরিমাণ কমে গেলেও বেড়েছে ফসলের উৎপাদন। কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখাগেছে ২০১৪ সালে আউশ, রূপা আমন ও বোর ফসলের উৎপাদন হয়েছিলে ২৫ লাখ ৫৯ হাজার ৫৭৩ মেট্রিকটন। তবে বর্তমানে ২০১৮-১৯ সালে উৎপাদনকৃত ফসলের পরিমাণ ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৩ মেট্রিকটন। গড় অনুপাতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও পটুয়াখালী জেলায় এর পরিমাণ কমেছে। ২০১৪ সালে এ জেলায় ধান উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৪ মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৪৯২ মেট্রিকটন। সে অনুযায়ী উৎপাদন কমেছে ১২ হাজার ১৯২ মেট্রিকটন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্যান বিশেষজ্ঞ জিএমএম কবির খান বলেন, জমি কমলেও প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে উৎপাদন বেড়েছে। তবে জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় আমাদের উফশী বা হাইব্রিড সহ উচ্চফলনশীল তাজ বীজ এর প্রতি নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। যার কারণে বৈরী আবহাওয়া এবং জলোচ্ছাস বা অতি বর্ষণের কারণে কৃষকদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় (খামার বাড়ি) এর উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম বলেন, জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চলমান উন্নয়ন, ইমরাত ও স্থাপনা নির্মাণকেই চিহ্নিত করা যায়। পাশাপাশি ইটভাটাকেও দায়ী করা যেতে পারে। কেননা ইটভাটার কালো ধোয়ার কারণে জসলি জমির উর্বরতা কমে যায়। যে কারণে ওই জমি ফসল উৎপাদনের জন্য কাজে আসে না।

তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরের হিসেবে ভোলা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে জমির বেশি কমেছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী জেলায় পায়রা সমুদ্র বন্দর, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, লেবুখালীতে সেনানিবাস নির্মাণে অনেক জমির প্রয়োজন হয়েছে। যে গুলো সবই ফসলি জমি ছিল। সমুদ্র বন্দর ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও বরগুনার আমতলির ফসলি জমিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠছে। সমস্ত কারণেই ওই অঞ্চলে জমির পরিমাণ বেশি কমেছে। ফসলি জমি নষ্ট করে এমন উন্নয়ন চলতে থাকলে একসময় দক্ষিণাঞ্চলে ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।

কেএসটি