• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১০, ২০১৯, ০৮:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১০, ২০১৯, ০২:৫২ পিএম

দালাল ছাড়া পাসপোর্ট হয় না ময়মনসিংহ পাসপোর্ট অফিসে

দালাল ছাড়া পাসপোর্ট হয় না ময়মনসিংহ পাসপোর্ট অফিসে
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস- ফাইল ছবি

 

দালাল ছাড়া পাসর্পোট হয় না ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসে। শক্তিশালী এ দালাল চক্রের নেপথ্যে প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেহেদি হাসান। প্রত্যক দালালের জন্য আলাদা আলাদা করে আধ্য অক্ষর দিয়ে সংকেত দেয়া হয় ফাইলে। দিন শেষে ফাইল হিসাব করে টাকা দিতে হয় অফিসকে। এমন অভিযোগ অসংখ্য ভুক্তভোগীর। এনিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলে। দালাল ছাড়া পাসপোর্টে নানা ভুল থাকে। হয়রানি করা হয় নানাভাবে। আর দালাল মাধ্যমে পাসপোর্ট করলে এসব ঝামেলা পোহাতে হয় না। ভুল তারাই ঠিক করে নেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে টাকা ছাড়া সেবা অচল। সাধারণ কোন মানুষ দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিতে গেলে ভুল হয়েছে বাহানায় ফেরত দেয়া হয় ওই আবেদন। ফরম পূরণ থেকে জমা দেয়া ও পাসপোর্ট গ্রহণ সবই করেন দালালরা। সত্যায়ন-পুলিশ ভেরিফিকেশন, আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই এবং তথ্যের সঠিকতা নিরূপণে সত্যায়িত করার কাজটিও করছেন তারাই। ফলে দালাল ছাড়া সাধারণ আবেদন প্রার্থীরা যেন বড়ই অসহায়। বর্তমান সরকার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সহজেই মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে এ সেবা চালু করলেও খোদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদদে ময়মনসিংহে ঘটছে উল্টো ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী দালাল সংগঠন। পাসপোর্ট অফিসের সামনেই রাস্তার পাশে টেবিল বসিয়ে প্রকাশ্যে দালালরা পাসপোর্টের কাজ করেছেন। অবশ্য দালাল নেতারা ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস খুলে করছেন পাসপোর্টের কাজ।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি পাসপোর্টে নির্দিষ্ট হারে কমিশন গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। ফলে পাসপোর্ট পেতে হলে এ সিন্ডিকেটের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই সাধারণ আবেদনকারীদের।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিস স্টাফ জানান, পত্রিকায় লিখে কোন লাভ নেই। আপনার মত অনেক সাংবাদিক এখানে আসে কিন্তু কোন কাজ হয় না। সবই দালাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। মাঝে মধ্যে পুলিশ-র‌্যাব এসে দালালদের দৌঁড়ায়। কিন্তু পরক্ষণে যেই-সেই অবস্থা।  

সেবাপ্রার্থী নান্দাইল উপজেলার রুবেল জানান, গত জানুয়ারিতে এক দালালের মাধ্যমে সাড়ে ৬ হাজার টাকা চুক্তিতে আবেদন জমা দিয়ে অবশেষে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। কিন্তু বাড়তি টাকা দিয়েও পাসর্পোট পেতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। 

ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাড. মইনুল হক মিলন জানান, নিয়ম অনুযায়ী আবেদন জমা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। পরে বাধ্য হয়ে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আবেদন জমা দিয়েছি। কারণ কাজ ফেলে পাসপোর্টের পেছনে দৌড়ানোর সুযোগ নেই।

নেত্রকোনা কেন্দুয়া উপজেলার শাহীন আহম্মেদ জানান, নিজে ব্যাংক ড্রাফট করেছি। কিন্তু অফিসের অবস্থা বুঝে বাধ্য হয়েই উজ্জল নামের এক দালালের মাধ্যমে ৫ হাজার ৬ শত টাকা চুক্তি করে আবেদন জমা দিয়েছি।  

জামালপুর জেলার শাকিল আহম্মেদ জানায়, নিজেই আবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু ৩ বার ভুল ধরে আমার আবেদন ফেরত দেয়া হয়। পরে বাধ্য হয়ে আতিক নামের এক দালালের মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা চুক্তি করে আবেদন জমা দিয়েছি। 

গফরগাঁও উপজেলার আবুল হোসেন জানান, চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে ১০ হাজার টাকা চুক্তি করে এক দালালের মাধ্যমে আবেদন জমা দিয়েছি। এ কাজ আমি একা করিনি। যারা এখানে পাসপোর্ট করতে আসে তারা সবাই আমার মত। কেই দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিতে পারে না। 

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেহেদি হাসান বলেন, দালাল বলতে কোন শব্দের সাথে আমি পরিচিত নই। ময়মনসিংহ অফিসে কোন দালাল নেই। দালাল ছাড়া আবেদন জমা হয় না, এটা আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। প্রমাণ দিতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএফ