• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০১৯, ১০:০১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৩, ২০১৯, ১০:০১ এএম

ইতনা গণহত্যা দিবস আজ 

ইতনা গণহত্যা দিবস আজ 

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গণহত্যা দিবস আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে)। ১৯৭১ সালের ২৩ মে ভোরে উপজেলার ইতনা গ্রামে ৩৯ মুক্তিকামী মানুষকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনীসহ এদেশীয় রাজাকাররা। বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বিষাদময় সেইদিনের কথা মনে করে এ অঞ্চলের মানুষ আজও আঁতকে উঠেন। চোখের জলে বুক ভাসান স্বজনেরা। এদিকে, ইতনা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ইতনা গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

জানাগেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদী তীরবর্তী পাশাপাশি দুই গ্রাম ইতনা ও চরভাটপাড়া। এই দুই গ্রামে বসেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণের নানা পরিকল্পনা করতেন। ভৌগলিক ও কৌশলগত কারণে আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এই দুই গ্রামে অবস্থান করে পাক-বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাতেন। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের ২২ মে দুপুরে চরভাটপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে নিরীহ মানুষজনের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে। এ সময়ে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধ। প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে ৪ জন পাক সেনা ও ১৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। এক পর্যায়ে পাক-সেনারা পিছু হটার সময় ইতনা গ্রামের অনিল কাপালি নামে একজন সাহসী ব্যক্তি এক পাক-সেনার কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে পাশের মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে ইতনা গ্রামে এসে আশ্রায় নেয়। এমন সংবাদে ২৩ মে ভোরে ওই গ্রামে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়।

গণহত্যার শিকার ফেলু শেখের স্বজনেরা জানান, ২৩ মে ভোরে ফেলুসহ ইতনার মুক্তিকামী ৩৯ জনকে নিরীহ মানুষকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। সেদিনের সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা ভোলার নয়। আতিয়ার শেখের পরিবারের সদস্যরা জানান, এইদিনে (২৩ মে) সরকারি উদ্যোগে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় না। এছাড়া কবরগুলো চিহিৃতকরণসহ কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। তবে, ইতনা গণগ্রন্থাগারের পরিকল্পনায় এবং শেখ সিরাজ ইশতিয়াক আফছার উদ্দিন ট্রাস্টের সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালের ২৩ মে ইতনা স্কুল ও কলেজের পাশে ৩৯ জনের ‘নামফলক’ স্থাপিত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, ১৯৭১ সালের ২৩ মে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন ইতনা গ্রামের শেখ হাফিজুল হক হিরু মিয়া, সৈয়দ শওকত আলী, সৈয়দ কাওছার আলী, সৈয়দ এসমত আলী, সৈয়দ মোশাররফ আলী, শেখ তবিবর রহমান তবি, সিকদার ওয়ালিয়ার রহমান, সিকদার হাবিবুর রহমান, মোল্যা মকলেসুর রহমান, রাশেদ গাজী, বাদল শেখ, বানছারাম মন্ডল, হারেজ ফরির, তরু মিনা, হেমায়েত হোসেন, রবি মোল্যা, আব্দুস সামাদ মোল্যা চুন্নু, পাচু মিয়া খদগির, মতলেব শেখ ওরফে কালমতে, নালু খাঁ, শেখ রফিউদ্দিন লেংটা, নুরুদ্দিন শেখ, কেয়ামদ্দিন ওরফে কিনু ফকির, মির্জা মোবারক হোসেন, নুরু মোল্যা, কুটি মিয়া মোল্যা, কানাই স্বর্ণকার, মোল্যা আব্দুর রাজ্জাক, মোল্যা সফিউদ্দিন আহমেদ, মোল্যা মানসুর আহম্মেদ, মালেক শেখ, শিকাদার হাদিয়ার রহমান, নবীর শেখ, ফেলু শেখ, মোহন কাজী ওরফে পাগলা কাজী, আতিয়ার শেখ, জহির শেখ, ছরোয়ার রহমান লেংটা ও বাকু শেখ। এদিকে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ইতনা গ্রামে আরো ১১ জন শহীদ হন। এরা হলেন-শিকদার হেমায়েতুল ইসলাম ধলু, অতুল পাল, পেনু ঘোষ, শেখ আতিয়ার রহমান খোকা, মির্জা রফিকুল ইসলাম, সরদার সামসুর রহমান বাঁশি, মিনা আব্দুর রাজ্জক, ছরোয়ার রহমান ভূঁইয়া, আতিয়ার রহমান ভূঁইয়া, হাসেম শেখ ও এসএম রেজাউল ইসলাম। 

ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাউর রহমান ফিরোজ বলেন, ইতনা গণহত্যা এত বড় একটি ঘটনা হলেও এটিকে সরকারিভাবে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। পালিত হয় না সরকারিভাবে কোন কর্মসূচি।

স্থানীয় নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ইতনা গণহত্যার ঘটনা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও সরকারিভাবে শহীদের কবর সংরক্ষণের কোন উদ্দোগ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ইতনার গণহত্যার বিষযটি স্থান না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শহীদদের রাষ্ট্রিয় সিকৃতিসহ গণকবর সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।

জেলা আনজুমান আরা বলেন, ইতনা গণহত্যার শহীদদের তালিকা তৈরি করে তাদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ শহীদদের গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

কেএসটি