কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সরকারি মূল্যে ধান সংগ্রহ কেউ কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু বাজারে বোরো ধান নিয়ে কৃষক যখন দিশেহারা তখন খাদ্য বিভাগ সরাসরি কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধান কেনায় তাদের হতাশায় আশার আলো জ্বলেছে। সরকারি মূল্যে বোরো ধান বিক্রি করতে পারায় লোকসান হতে রক্ষা পাচ্ছেন।
চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর। অর্থাৎ ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করেন চাষিরা। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪শ মেট্রিক টন চালে।
অপরদিকে, জেলার ১ হাজার ৬শ ৯০ জন হাসকিং ও অটোমিল মালিক সরকারের সঙ্গে চাল দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু মিল প্রতি বরাদ্দ পায় সর্বোচ্চ ৫শ বস্তা। এতে করে মিল মালিকরা তাদের বরাদ্দের ধান কিনে নিয়ে বাজার বিমুখ হয়। এ কারণে ক্রেতা না থাকায় চাষিরা বাজারে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। তাও দাম মাত্র ৩শ টাকা হতে ৪শ টাকার মধ্যে। এতে কৃষকেরা এবার বোরো ধান চাষ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় ধানের নায্য মূল্যের দাবিতে রানীশংকৈলে মানববন্ধন করে চাষিরা। অপরদিকে সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি এলাকায় স্থানীয় কৃষকেরা ঢাকা-পন্চগড় মহাসড়কে রাস্তায় ধান ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
এ অবস্থায় খাদ্য বিভাগের টনক নড়ে। উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে উপজেলা খাদ্য বিভাগ সদর উপজেলার গড়েয়া, বেগুনবাড়ি, মোহাম্মদপুর, শীবগঞ্জ, আউলিয়াপুর, রুহিয়া, শুকানপুখুরী, দেবীপুর, সালন্দর ও জামালপুর ইউনিয়নে গিয়ে সরাসরি কৃষকদের নিকট বোরো ধান সংগ্রহ করে।
বর্তমানে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংহ রায় বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সরাসরি কৃষকদের নিকট ধান কিনছেন এবং এলাকাবাসীকে পরামর্শ দিচ্ছেন ধান শুকিয়ে বাড়িতে সংরক্ষণ করার। ওই ১০ ইউনিয়নের ১৫৬ জন কৃষকের ১৫৬ মে. টন ধান সংগ্রহের প্রত্যয়ন দেওয়া হয়।
অবশ্য ব্যবসায়ীরা সরকারের ধান চাল সংগ্রহ অভিযানের সমালোচনা করে বলেন, সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি না করে যদি মিল মালিকদের নিকট চাল সংগ্রহ করে তবে মিল মালিকরা প্রতিযোগিতা করে বাজার থেকে ধান কিনবে। এতে চাষিরা ধানের নায্য মূল্য পাবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংহ রায় বলেন, এবার সদর উপজেলা থেকে এবার ৭৫০ টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হবে। প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ধান নেওয়া হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য দরে ধান নিতেই মাঠ পর্যায়ে গিয়ে চাষিদের প্রত্যয়ন দেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেহেতু ধান কর্তক কেবল শুরু। তাই মাঠ পর্যায় গিয়ে কৃষকদের ধান সংগ্রহের প্রত্যয়ন দেওয়া হচ্ছে। একজন কৃষক ১ টন ধান দিতে পারবে। প্রত্যয়ন পাওয়া কৃষকগণ সরকারি গুদামে ধান ২৬ টাকা কেজি দরে ধান বিক্রি করতে পারবে।
চলতি সংগ্রহ অভিযানে জেলার ৫ উপজেলায় ১৮শ ৫৪ মে. টন বোরো ধান সংগ্রহ করবে জেলা খাদ্য বিভাগ। বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা খাদ্য বিভাগের সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। ওই দিন সদর উপজেলার আকচা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন ও কশালবাড়ি গ্রামের মোকছেদুল আলম ১ টন করে বোরো ধান দেন খাদ্য গুদামে।
কেএসটি