• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২১, ২০১৯, ০৮:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২১, ২০১৯, ০৮:৫৬ পিএম

চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতির পেটের ভেতর গজ ব্যান্ডেজ তুলা

চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতির পেটের ভেতর গজ ব্যান্ডেজ তুলা

চুয়াডাঙ্গার মা ক্লিনিক নামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পর পলি খাতুন (২৯) নামের এক প্রসূতির পেটের ভেতর থেকে গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা বের হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দুজন আনাড়ি ডাক্তার দিয়ে দুই দফায় পলিকে অস্ত্রোপচার করলেও তিনি সুস্থ হননি। বরং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পলি খাতুনের স্বামী বিপুল আলী জানান, জীবনে প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দে বিভোর ছিলেন তিনি। সন্তান প্রসবের বেদনা উঠলে স্ত্রী পলিকে ভর্তি করানো হয় চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল এলাকার বেসরকারি মা ক্লিনিকে। গত ২০ মে ভর্তির পর বিকালে ডা. লিফা নারছিস চৈতী অস্ত্রোপচার করেন পলিকে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পলি খাতুন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান প্রসব করেন। সন্তান প্রসবের চার দিন পর ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠায় রোগীকে।

প্রসূতির মা আসমা খাতুন জানান, ক্লিনিক থেকে বাড়িতে যাওয়ার কয়েক দিন পর পলির পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। পেট ফুলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পলি। তাকে পুনরায় একই ক্লিনিকে নিয়ে এলে আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। পরেরবার অস্ত্রোপচারটি করেন সার্জারি বিশেষজ্ঞ এহসানুল হক তন্ময়।

পলি খাতুনের দাবি, দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের সময় তার পেট থেকে বের হয় গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা। এ সময় তিনি চিকিৎসকের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাইলে চিকিৎসক এড়িয়ে গিয়ে জানান, ‘বাচ্চার শরীরের ময়লা ছিল। পরিষ্কার করে সেলাই করে দিয়েছি, এখন আর কোনো সমস্যা নেই।’

পলির বাবা জেদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার শিকার। তিনি জানান, মা ক্লিনিক থেকে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের পর বাড়িতে যাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে আমার মেয়ে। পুনরায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার (২১ জুন) সকালে পলিকে মা ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বাবদ আবার ৪ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে বের করে দেওয়া হয় ক্লিনিক থেকে। উপায়ন্তর না পেয়ে মেয়েকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালট্যান্ট ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান, পেটে গজ-ব্যান্ডেজ থাকার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে রোগীর পেটের সেলাইয়ের স্থানে ইনফেকশন হয়েছে। ক্ষতের মাত্রাটি একটু বেশি। তাছাড়া রোগীর শরীরে রক্ত কম। সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।

অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক লিফা নারছিস চৈতী এসব অভিযাগ অস্বীকার করে বলেন, কোনো ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটেনি। অস্ত্রোপচার সফল ছিল। রোগীর অ্যাজমাজনিত সমস্যা ছিল। এ কারণে অতিরিক্ত হাঁচি ও কাশিতে রোগীর পেটের সেলাই কেটে গিয়েছিল। পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রোগীর পেট থেকে গজ-ব্যান্ডেজ-তুলা থাকার বিষয়টি মিথ্যা ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, অভিযোগটি গুরুতর। বিষয়টি অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে গঠন করা হবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একই সমস্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের বেডে কাতরাচ্ছেন অপর আরেক প্রসূতি আসমা খাতুন। তারও গত ১ মে অস্ত্রোপচার করানো হয় ওই মা ক্লিনিকে। অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকও ছিলেন ডা. লিফা নারছিস চৈতী। সিজারিয়ানের পর আসমা খাতুনেরও ক্ষতস্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলার গোয়ালবাড়ী গ্রামের ইমরান আলীর স্ত্রী।

এনআই