• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৯, ০১:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৭, ২০১৯, ০১:৩৬ পিএম

আটক নেই সংশ্লিষ্ট মামলায়

সাভারে ১১ দিনে ২২ মরদেহ উদ্ধার

সাভারে ১১ দিনে ২২ মরদেহ উদ্ধার

সাভার পৃথক ঘটনায় গত ১১ দিনে ২২ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে সাভার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানা পুলিশ। তবে পৃথকভাবে আশুলিয়া থানা পুলিশ ১৩টি ও সাভার মডেল থানা পুলিশ ৯টি মরদেহ উদ্ধার করে। এতে দুই নারী ও কিশোরসহ চারটি হত্যা ও চার নারীর রহস্যজনক মৃত্যু। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় পোশাক শ্রমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ মোট পাঁচ জন। আত্মহত্যাসহ বিভিন্নভাবে মৃত্যু হয় চার নারীসহ নয় জনের। 

গত ১০ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া এসব মরদেহের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি। 

সূত্র মতে, সোমবার (১০ জুন) সকালে সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লায় অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল পলাশ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজার করতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় মা তানিয়া আক্তার (২০) ও নবজাতক শিশুর। তবে এ ঘটনায় নিহত তানিয়ার স্বামী আজিজুর রহমান বাদি হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। তবে মামলার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি না পেয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পরে রোববার (২৩ জুন) দুপুরে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা আমজাদুল হক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 

পরের দিন মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে সাভারের আশুলিয়ার মরাগাঙ্গ এলাকায় দুই ডাকাত দলের গোলাগুলিতে মোটা বাবুল অরুপে বাবুল হাওলাদার (৪৫) নিহত হয়। তবে এই ডাকাত দলের সক্রিয় ৫০ সদস্যের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে ঢাকা জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আটক করেছে জেলা পুলিশের সদস্যরা। একই দিনে বিকেলে সাভারের আক্রাইন এলাকায় স্বামীর কুড়াল দিয়ে স্ত্রীকে কোপ দেয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৩)। পরে স্থানীয়রা স্বামী সুরুজ্জামান বকুলকে আটক করে সাভার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

বুধবার (১২ জুন) সকালে সাভারের আশুলিয়া এলাকার অন্ধকলোনী থেকে রহস্যজনকভাবে তানিয়া খানম (১৮) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ঘটনার পরেই স্বামী তুহিন খন্দকার ওরফে মাসুদ পালিয়ে যায়। একই সময় আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার থেকে পালার ব্যবসায়ী সোনিয়া আরফিন ও  সাভারের উল্লাইল এলাকায় এবং নরসিংহপুর এলাকা থেকে পৃথক দুই মরদেহ উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। একই দিনের দুপুরে আশুলিয়ার মির্জানগর এলাকায় স্ত্রী জেসমিন বেগমকে (২৩) শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়েছে ঘাতক স্বামী। সন্ধ্যায় সাভার পৌর এলাকার মজিদপুরের সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে খোকন (৫৫) ও সোহেল (৪৫) নামে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।  

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বলিভদ্র এলাকায় থেকে অজ্ঞাত বৃদ্ধের (৬০) রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
 
পরের দিন শুক্রবার (১৪ জুন) ভোরে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজ্জারমেল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আনিস (৪০) নামে এক পোশাক শ্রমিক নিহত হয়। একই দিনের দুপুরে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বলিয়ারপুর এলাকায় হানিফ বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মিন্টু (২৬) প্রাণ হারায়। তবে একই দিনের বিকেলে আশুলিয়ার নবীনগর নিরিবিলি এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে নিখোঁজের ১৪ দিন পরে সজিব শেখ (১৬) নামে এক কিশোরের রহস্যজনক অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরে এঘটনায় আশুলিয়া থানায় কিশোরের পরিবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
   
মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে আশুলিয়ার টেংগুড়ি এলাকার মিজানুর রহমানের মালিকাধীন বাড়ির ৪ তলা ভবনের বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে লাবীব খন্দকার (২৮) মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। 
পরের দিন বুধবার (১৯ জুন) সকালে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমিন বাজার এলাকায় বাসচাপায় ইসতিয়াক হোসেন (৩৬) নামে এক পিকআপ ভ্যান ড্রাইভারের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ঘাতক বাসটিকে আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়। একই দিনের আশুয়িলার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের শ্রীপুর এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকচাপায় সদর আলী (৬১) ও আলমগীর হোসেন (২৮) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। 

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের তুরাগ নদীর তীর থেকে অর্ধগলিত ভাসমান অজ্ঞাত এক তরুণীর (১৮) রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। পরে এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সময় সাভার পৌর এলাকার ওয়াপদা রোড় মহল্লায় রোদেলা বেগম (১৮) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় সাভারের আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ইউসুফ মার্কেট মহল্লায় নিজ ভাড়া বাসায় বিছানার উপরে রহস্যজনকভাবে জান্নাতি (১৯) নামে এক গৃবধূর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা। পরে খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। একই দিনে রাতে আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চিরিঙ্গা পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে রুবি আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। তবে এ ঘটনায় পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের সদস্যদের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজগর আলী ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজাহারুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার ময়না তদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানান তারা।

কেএসটি