• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০১৯, ০৮:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৯, ২০১৯, ০৯:১৫ এএম

যমুনায় বাড়ছে পানি

ভাঙনের কবলে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি

ভাঙনের কবলে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি
যমুনার ভাঙনের কবলে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি -ছবি : জাগরণ

জোয়ারের পানি আসার শুরু হতে না হতেই যমুনায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এর ফলে বর্ষার শুরুতেই যমুনার অতল গহবরে বিলীন হতে শুরু করেছে তীরবর্তী টাঙ্গাইলের মামুদনগর ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। এরইমধ্যে ইউনিয়নটির ৭নং ওয়ার্ডট সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়নবোর্ড জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও ঘুর্ণস্রোতে তা ভেসে যাচ্ছে আগ্রসী যমুনায়। এদিকে  ভাঙন আতঙ্কে পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোর কয়েক শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাই সর্বনাশা এই ভাঙনরোধে একটি স্থায়ী বাঁধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির ঢলে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় মামুদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে পাউবো’র আপদকালীন তহবিল থেকে ১২টি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতি স্প্যানে ৩ হাজার পিস করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরুরি কার্যক্রম হিসেবে গত ১৭ জুন থেকে ওইসব স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদ নগর ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনের শিকার গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে, কুকুরিয়া, কেশব মাইঝাইল, মাইঝাইল, সোনা মাইঝাইল, বার বাড়িয়া, চালা বাকলা ও বানিয়াপাড়া। এসব গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে পাট, ধান, বাদামসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি এরইমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ের ভাঙনের শিকার হয়ে আরো ৫শ পরিবার অনত্র চলে যায়। ভরা বর্ষায় যমুনার স্রোতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই গবাদিপশুসহ ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
 
ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল হাই, করিম শেখ, জুলহাস, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, আবু সাইদ, সিরাজুল ইসলাম, মো. কছির উদ্দিন মণ্ডল, রাজ্জাক প্রামাণিক, আ. খালেক রোশনাই, সাবেক মেম্বার আজমত আলী, আরমান, মান্নান, জিন্নত সরকার, আ. সামাদ, রহম আলী সরকারসহ অনেকেই জানান, প্রমত্তা যমুনা সর্বগ্রাসী। প্রতি বছরই এ অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি কেড়ে নেয়। মামুদ নগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পুরোটাই গেছে বর্তমানে যমুনার পেটে। এ ওয়ার্ডের দুই হাজার ৭শ ভোটারের প্রত্যেকের পরিবারই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা নিজেরা অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। ২টি হাইস্কুল, ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, গোরস্থানসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও ৫টি মসজিদ, ৩টি গোরস্থানসহ ৫শ ঘর-বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।

 

কুকুরিয়া গ্রামের করিম শেখ জানান, তার নিজের এক খাদা (১৬ বিঘা) ফসলি জমি যমুনা গ্রাস করেছে। তিনি আগেই বাজারের পাশে বাড়ি করেছিলেন। বর্তমানে সেই বাড়িটিই তার একমাত্র সম্বল। একই গ্রামের আবু সাইদ জানান, তাদের পরিবারের ১৫০বিঘা জমি ছিল সবই যমুনার পেটে চলে গেছে। তিনি করটিয়ায় বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন।

তিনি আরও জানান, মাটির টান বড় টান। কাউকে যেন ঘর-বাড়ি হারাতে না হয়। তাদের সবার দাবি, কুকুরিয়া থেকে উজানে ৪ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক। 

তারা আরও জানায়, বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে ভাঙন কবলিত ৫৫০মিটার এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলছে। পাউবো’র ধারণা ছিল, এতে পানির স্রোতের গতি পরিবর্তিত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে যাবে। পানির স্রোতের গতি কিছুটা পরিবর্তীত হলেও ওই স্প্যানগুলোর মাঝখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো স্প্যানের জিও ব্যাগ দেবে যমুনার তলদেশে চলে গেছে। ফলে জিও ব্যাগের অন্য স্প্যানগুলোও যমুনায় দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মামুদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাজেদুর রহমান তালুকদার জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙনে মামুদ নগর ইউনিয়নের মানুষ দিশেহারা। একদিকে যমুনার করাল গ্রাস অন্যদিকে ধলেশ্বরীর বিরামহীন ভাঙনে ইউনিয়নবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। এরইমধ্যেই ইউনিয়নটির বসত বাড়ী, প্রাইমারি ও হাইস্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ফসলি জমির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্রায় সহস্রাধিক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভয়াবহ এ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে প্রায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে সহস্রাধিকের বেশি পরিবার। 

তিনি আরও বলেন, ভাঙন কবলিত কুকুরিয়া থেকে উজানে ৪ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলেও যমুনার ভাঙন থেকে এ ইউনিয়নের মানুষ রেহাই পেত। তিনি দ্রুত ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কুকুরিয়া থেকে উজানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই স্থায়ী বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তবে ভাঙনরোধ ও জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ওই এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলার কারণে পানির স্রোতের গতি অনেকটা পরিবর্তীত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে গেছে। তবে দুই স্প্যানের মাঝে ঘুর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় সেখানেও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৫ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যে পাউবো সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।


একেএস