• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০১৯, ০৩:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৫, ২০১৯, ০৩:৪৩ পিএম

৩ মাস ধরে ঝুলছে তালা

অবহেলায় মৌলভীবাজারের পাবলিক লাইব্রেরি

অবহেলায় মৌলভীবাজারের পাবলিক লাইব্রেরি

মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরির কার্যক্রম বিগত ৩ মাস ধরে পুরো দমে বন্ধ রয়েছে। লাইব্রেরির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। বই প্রেমি পাঠকরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। অবহেলা ও অযত্নে ইতি মধ্যে নষ্ট হয়েছে পুরানো অনেক বই। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে ৮ বছর। ২০১০ সালে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নাম মাত্র আহ্বায়ক কমিটি আছে। আহ্বায়ক কমিটিও দায়সাড়া দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালে কমিটি নিয়ে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। দীর্ঘ ৬ বছর মামলা চলার পর ২০১৬ সালে আদালত মামলাটি খারিজ করে। 

জানা যায়, ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এ লাইব্রেরি মৌলভীবাজারের মুক্তবুদ্ধি ও সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ভুমিকা পালন করছে। মেধাবী তরুণ প্রজন্ম তৈরি করতে এই লাইব্রেরির ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। এ জেলার হাজার হাজার মানুষের শৈশব ও তারুণ্যের একাধিক স্মৃতি এই লাইব্রেরির সাথে জড়িত। কিন্তু জনপ্রতিনিধি ও আহ্বায়ক কমিটির উদাসিনতার কারণে লাইব্রেরিটির এমন অচলবস্থা।

গ্রন্থাগারিক শোভাময় রায় সজল বলেন, লাইব্রেরিটি স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, মেয়র ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার গেলেও কোনো সাড়া পাইনি। সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বদলি হওয়ার কিছু দিন আগে উনার কাছে সাক্ষাৎ করতে যাই। সাথে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মুহিবও ছিলেন। এসময় জেলা প্রশাসক আমাদের কথা শুনে বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি আছে বলে আমি তো জানতাম না। পরবর্তীতে উনাকে সব কিছু বলি এবং উনি সকল তথ্য সংগ্রহ করে রাখেন। এর আগে আহ্বায়ক কমিটির কেউই জেলা প্রশাসকের সাথে এ বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। 

তিনি আরও বলেন, গেইট বন্ধ পেয়ে প্রতিদিন পাঠকরা এসে আমাকে ফোন দেন। কিন্তু কর্মচারীদের সম্মানি পরিশোধ না করায় কেউই লাইব্রেরিতে সময় দিতে রাজি নয়। বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে ফেরত যাচ্ছে এবং বই পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর্মচারীদের সম্মানি, বিদ্যুৎ বিল ও কয়েক মাসের পত্রিকা বিল বকেয়া রয়েছে।

২০০৮ সালে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য প্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরী বলেন, কমিটিতে থাকাকালীন সময়ে কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হলেই লাইব্রেরিয়ান সজল দা আজীবন সদস্যের কয়েকটা ফরম তুলে দিয়ে বলতেন টাকার ব্যবস্থা করেন। লাইব্রেরির খরচের টাকা সংগ্রহ করতে অনেককে আজীবন সদস্যের ফরম পূরণ করিয়েছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু বই সংগ্রহ করেছি। কিন্তু লাইব্রেরির আজ এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগছে। 

২০০৮ সালের নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা বলেন, ২০১১ সালে জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান অচলাবস্থা নিরসনে চেষ্টা করলেও সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম তার প্রায় তিন বছর মৌলভীবাজারে দায়িত্ব পালনকালে এ ব্যাপারে ছিলেন সম্পূর্ণ নিরব। 
তারা আরও বলেন, শুধু লাইব্রেরির সম্পাদক পদটি নিয়ে সুবিধাভোগী চক্রগুলির ইতরামি ও অচলাবস্থার কারণে পত্রিকার বিল, কর্মচারী বেতন দেয়া বন্ধ হবার প্রেক্ষিতে লাইব্রেরি আজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাট্যকার আবদুল মতিন বলেন, সভা আহ্বান করার জন্য আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে একাধিকবার অনুরোধ করেও সভা বসাতে পারিনি। চেয়ার ছাড়ার ভয়ে কেউই সভা আহ্বান করতে রাজি নয়। সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসকও নানা ভাবে অসহযোগীতা করছেন। এদিকে জেলা পরিষদ লাইব্রেরির জায়গাটুকু দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। 

সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মুহিব বলেন, এই পর্যন্ত ২ বার পদত্যাগ পত্র দিয়েছি। কিন্তু জেলা প্রশাসক আমার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেননি। 

টিএফ