• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম

শেরপুরে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৬০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

শেরপুরে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৬০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে ঝিনাইগাতী-হাতিবান্দা এলাকার কাঠের ব্রিজ- ছবি : জাগরণ

পাঁচ দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি রয়েছে ১৫ হাজার পরিবার। প্লাবিত গ্রামগুলোর কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, সবজি, পুকুরের মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকলে পানিবন্দিদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার ৬০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত গ্রামের রাস্তাঘাট, আমন ধানের বীজতলা ও সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। এতে গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। বাড়িতে পানি উঠায় চুলা জ্বালাতে পারছেন না প্লাবিত এলাকার মানুষ। শুকনো খাবার খেয়েই দিন পার করছেন তারা।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারসী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েছে। নদীগুলোর তীরবর্তী বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ৪ ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। 

ঝিনাইগাতী দড়িকালীনগর এলাকার হোসনে আরা বলেন, দুইদিন ধরে ঘরের মেঝে ও চুলায় পানি উঠেছে। তাই রান্নাও করতে পারি নাই। পোলা-পান (বাচ্চা) নিয়ে শুকনো খাবার খেয়ে আছে। তবে গৃহপালিত পশুগুলো শুকনো খড় ছাড়া অন্য কোন খাদ্য খেতে পায়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে তাদের কোন খোঁজ-খবর নেননি কেউ।

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে- ছবি : জাগরণ 

এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নকলা উপজেলার মৃগী নদীতে পানির তীব্র স্রোতের ভাঙন শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের দিকে মৃগী নদীর ভাঙনে নকলার বাছুর আলগা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের বাড়ির বসতভিটাসহ মাহবুব হাজী ও জামাল চৌকিদারের ১০ শতক আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।

নকলা উপজেলার সাদিকুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতের কারণে নকলায় মৃগী নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভারী বর্ষণের কারণে চিকারবাড়ী ঘাট সংলগ্ন ২০ ফুট পাকা রাস্তার নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ওই সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ও মরিচপুরান ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে নতুন করে পাহাড়ি ঢল প্রবেশ করেছে। ভোগাই নদীর তীরবর্তী বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ার আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে নালিতাবাড়ী পৌরশহরের গড়কান্দা এলাকায় চেল্লাখালী নদীর পানিতে কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ শুরু করেছে।

মরিচপুরান ইউনিয়নের বাসিন্দা আকন্দ মিয়া বলেন, আমাদের এ ইউনিয়নে শনিবার দুপুর থেকে পানি প্রবেশ করছে। এতে আমরা খুব চিন্তাই পড়ে গেছি।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) লুবনা শারমিন বলেন, উজানের পানি নেমে আসায় কিছু গ্রামে পানি প্রবেশ শুরু করেছে। এখনো পানিবন্দি হবার ঘটনা ঘটেনি। 

নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ভারী বর্ষণে নদীতে পানির তীব্র স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের হাত থেকে সতর্ক থাকার জন্য এলাকাবাসীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশংকা উপজেলা প্রশাসনের। তবে যেকোন পরিস্থিতি সামাল দিতে ত্রানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

কেএসটি