• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০১৯, ১০:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৭, ২০১৯, ১০:১৮ পিএম

দামে উঠছে না ধানের উৎপাদন খরচ, বিপাকে কৃষক

দামে উঠছে না ধানের উৎপাদন খরচ, বিপাকে কৃষক
চাটমোহর নতুনবাজার হাটে ৬৩০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন কৃষক ইউনুস  -  ছবি : জাগরণ

চলতি বছরে এক মণ বোরো ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। বাজারে সেই ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৬০০-৬৫০ টাকা। ফলে দামে  উঠছে না ধানের উৎপাদন খরচ। নিজেদের উৎপাদিত ও চাহিদার অতিরিক্ত ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাবনার চাটমোহরের কৃষকেরা।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, লাভ না পেলে কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

এদিকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযানও তেমনটা কাজে লাগছে না এসব কৃষকের। কারণ কৃষকের প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য বিভাগ ধান কিনছে কম পরিমাণে। তাছাড়া সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে ‘ভাগ্য’ লাগছে কৃষকের। অনিয়ম রোধে এ বছর লটারির মাধ্যমে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছে খাদ্য অধিদপ্তরের স্থানীয় দপ্তর। এর পরও একটি অসাধু চক্র টাকার বিনিময়ে বিজয়ী কৃষকের কার্ড কিনে নিচ্ছে। কারণ, ভাগ্যবান কৃষক টাকার প্রয়োজনে আগেই তার ধান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ সুযোগে চক্রটি সংশ্লিষ্ট কৃষকের মাধ্যমে নিজেদের ধান খাদ্যগুদামে দিচ্ছে। এ খবর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা।

বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে চাটমোহর নতুন বাজার হাটে ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন উথুলী গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম। তিনি বলছেন, ৬৩০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছেন। বেপারী (ধান ব্যবসায়ী) এ ধান কিনেছেন। ৫ মণ ধান বিক্রির জন্য এনেছিলেন তিনি।

ধান ব্যবসায়ী মাধব হালদার বলছিলেন, ‘বাজারে ধানের দাম ৬০০ টাকা মণ দরই বেশি চলছে। ধান বেশি ভালো আর শুকনো হলে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমি গড়ে ধান কিনছি ৬০০ টাকা মণ দরে।’

ইউনুস, সাইদুলসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর এক মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ন্যূনতম ৭০০ টাকা। কোনো কোনো কৃষকের ক্ষেত্রে এ খরচ দাঁড়িয়েছিল ৮০০ টাকায়। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকটের কারণে ওই সব কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। বর্তমান বাজারদর হিসাবে মণপ্রতি কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫০-১০০ টাকা।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান রশীদ হোসাইনি বলেন, এ বছর প্রায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদিত ধানের পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলায় কৃষিকার্ড রয়েছে, এমন কৃষকের সংখ্যা ৫১ হাজার। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মাত্র ৩৩৪ জন কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। ধানের বাজারদর ১ হাজার টাকা হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, লাভ না পেলে ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন কৃষক।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চাটমোহরে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস। এদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ধান। ফলে চাহিদার অতিরিক্ত ১৫ হাজার মেট্রিক টন ধান কৃষককে হাট-বাজারে বিক্রি করতে হবে। বর্তমান বাজারদর হিসাবে ১৫ হাজার মেট্রিক টন ধানে কৃষককে ১ কোটি ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে।

চাটমোহর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান জানাচ্ছেন, এ বছর মোট ৮৯০ মেট্রিক টন ধান কিনবেন তারা। কয়েক ধাপে কেনা হবে এ ধান। প্রথম ধাপে ৩৩৫ মেট্রিক টন ধান কিনছেন তার। এর মধ্যে বুধবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে  ১৪৬ মেট্রিক টন ধান।  প্রথম ধাপে ধান কেনার সময় শেষ হবে ৩০ আগস্ট। প্রতি কেজি ধান কেনা হচ্ছে ২৬ টাকা দরে।

এনআই

আরও পড়ুন