• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০১৯, ১০:২৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৯, ২০১৯, ১০:২৮ এএম

আরিচায় বিকল্প ফেরি ঘাট চালুর দাবি ট্রাক চালকদের

আরিচায় বিকল্প ফেরি ঘাট চালুর দাবি ট্রাক চালকদের

আরিচায় পুনরায় বিকল্প ফেরি ঘাট চালু করার দাবি জানিয়েছেন চার দিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে আটকে থাকা ভুক্তভোগী ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা। আরিচায় বিকল্প ফেরি ঘাট চালু থাকলে হয়তো তাদেরকে নদী পারাপারের জন্য ঘাটে এসে এভাবে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো না বলে মনে করছেন ট্রাক শ্রমিকরা। আরিচা-দৌলতদিয়া-কাজিরহাট নৌপথ চালু রয়েছে। নেই শুধু ফেরি ঘাট। এ নৌপথে ফেরি বাদে লঞ্চ, স্পিডবোটসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে এবং বঙ্গবন্ধু  সেতু এলাকায় যানজটের কারণে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের শত শত যাত্রী নদী পারাপার হয়ে থাকে এই আরিচা ঘাট হয়ে। ফলে আরিচা ঘাটের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। 

জানা গেছে, এক সময় আরিচা-নগরবাড়ি ও আরিচা-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু ছিল। ফলে এখানে গড়ে ওঠে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর আঞ্চলিক অফিস। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রয়েছে বড় বড় দুটি টার্মিনাল। টার্মিনালে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএর বিশাল আকারের টিনের ঘরসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। ঘাট ব্যবস্থাপনায় যা যা দর তার প্রায় সবই আছে। শুধু ঘাট নির্মাণ করে পন্টুন লাগালেই আরিচা থেকে ফেরি সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে। আরিচা ফেরি ঘাট চালু হলে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব হবে বলে যানবাহন শ্রমিক ও স্থানীয়রা  মনে করছেন।  
রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের উত্তর-পশ্চিামাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এই আরিচা ঘাট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকতো এখান দিয়ে। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টায় ছিল লোকে লাকারণ্য। হোটেল-রেস্তোরাঁসহ গড়ে ওঠেছিল বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ছিল শত শত লোকের কর্মসংস্থান। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হবার পর আরিচা ঘাটের গুরুত্ব কিছুটা কমে যায়। চালু থাকে শুধু  আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনের তাগিদে ২০০২ সালে আরিচা ফেরি ঘাট স্থানান্তর করে পাটুরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। চালু হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস।  এতে আরিচা ঘাট একেবারেই গুরুত্ব হীন হয়ে পড়ে। যদিও যাত্রীদের সুবিধার্থে ফেরি ঘাট আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু সুবিধার পরিবর্তে অসুবিধাই বেশি হচ্ছে। নাব্যতা সংকট, নদী ভাঙ্গন, ঘনকুয়াশা এবং বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে অধিকাশং সময়ই ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়াসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। ফলে পাটুরিয়া ঘাটের যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় যাত্রীবাহী বাস বিশেষ করে নাইট কোচগুলোকে রাত ১২টায় ঘাটে এসে পরের দিন বেলা ২টায় পার হতে হয়েছে। এভাবে পাটুরিয়া ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হলে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহনগুলোকে ১২/১৪ ঘণ্টা করে অপেক্ষার পর ফেরি পারাপার হতে হচ্ছে। আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হয় তিন থেকে চারদিন করে। অনেক সময় এক সপ্তাহ সময় লেগে যায় নদী পার হতে। মাওয়া-কাঁঠালবাড়িয়া নৌরুটে চলাচলরত ফেরিরগুলোর একই অবস্থা।

এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে এবং বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যা ১০/১২ ঘণ্টায়ও লাঘব হয় না। এসব যানজটে আটকা পড়ে প্রতিনিয়তই যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদেরকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমতাবস্থায় যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের সুবিধার্ধে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাটে পুনরায় ফেরি ঘাট চালুর দাবি সর্বমহলের। এতে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।  

ট্রাক চালক হানিফ খান বলেন, পাটুরিয়া ঘাটে যানজট সমস্যার কারণে বেশির ভাগ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াত করে থাকেন । এবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের কারণে তিনি ঢাকা-পাটুরিয়া রোডে আসেন। কিন্তু পাটুরিয়া ঘাটে এ অবস্থা আগে জানতেন না তিনি।     
তিনি কুষ্টিয়া যাবার উদ্দেশ্যে তার কাভার্ড ভ্যানে মশার কয়েল ভর্তি করে গত ১৭ জুলাই রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসেন। রাত দেড়টায় পাটুরিয়া সংযোগ মোড়ে আসলে ঘাটে যানজটের কারণে তার গাড়ি পুলিশে আটকিয়ে দেয়। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যাও সংযোগ মোড়েই আটকে থাকতে হয় তাকে। দুই দিনে ঘাটেই পৌঁছাতে পারেননি। 

করিম গ্রুপের কাভার্ড ভ্যান চালক ইশারত সরদার বলেন, আমি ডাল ভর্তি করে টেকেরহাট যাবার উদ্দেশ্যে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসি। গত ১৭ জুলাই সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাথুলী ওয়েট স্কেলের কাছে আসলে পুলিশ সারাদিন ওখানে আমার গাড়ি আটকিয়ে রেখে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়। রাত ১০টায় পাটুরিয়া সংযোগ মোড়ে আসলে ঘাটে যানজটের কারণে পুলিশ আমার কাভার্ড ভ্যানটি আবার আটকিয়ে দেয়। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায়ও ঘাটে পৌঁছাতে পারিনি। সংযোগ সড়কের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে অলস সময় পার করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ২৪ ঘণ্টা লাগে টেকেরহাট যেতে। এখন কত দিন লাগবে তা বলতে পারছি না। এমতাবস্থায় আরিচায় ফেরি ঘাট চালুর দাবি জানান তিনি। 
ট্রাকা চালক আবু তালেব জানান, গত ১৭ জুলাই রাতে ঢাকা থেকে ছোলার প্যানেলের সরকারি মালামাল ভর্তি করে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে পাটুরিয়া সংযোগ মোড়ে আসলে পুলিশ তার  ট্রাক আটকিয়ে দেয়। শুক্রবার সকালেও ফেরি পার হতে পারেননি সে। কখন ফেরির নাগাল পাবেন তাও বলতে পারছেন না তিনি। আল্লাহর ওপর ভরসা করে বসে আছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে আরিচায় বিকল্প ফেরি ঘাট চালুর দাবি করেন তিনি। আরিচা-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু থাকলে হয়তো তাকে এরকম দুর্ভোগ পোহাতে হতো না বলে তিনি মনে করেন।  

কেএসটি