কলকাতা: নামেই বর্ষা এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গে গত একমাস বৃষ্টির প্রায় দেখা নেই। আর বৃষ্টি নেই, তাই বাঙালির পাতে ইলিশও নেই! রসনা তৃপ্তিতে বাঙালির এই আকাল শেষ কবে দেখা গিয়েছে, তাই নিয়ে তর্ক চলছে।
বাঙালি ভোজনরসিক বলে সমাদৃত. বাঙালির সম্পর্কে চালু রসিকতা হল, হজমের সমস্যা থাকলেও পকেটে গ্যাস-হজমের ওষুধ রেখে খেতে বসে. এমন লোলুপ বাঙালির পাতে এবার সমুদ্রের রুপালি ফসল নেই! অথচ আষাঢ মাস পেরিয়ে শ্রাবণ মাস পরে গেছে. বাজারে যুতসই ইলিশ কবে পাওয়া যাবে, তা বলতে পারছেন না কেউই।
একটু দেরিতে এবার পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা এসেছে জুলাইয়ের মাঝামাঝি। প্রথম বর্ষার ঝিরঝিরে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি আর পূবালী হাওয়ায় ভর করে সমুদ্রের রুপালি শস্য ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে নদীর অববাহিকায়—এটাই ফি বছরের ইলিশ আসার ছবি। কিন্তু এবার বর্ষার অতিথির এখনও দেখা নেই কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথর প্রতিমা, রায়্দিঘি, ডায়মন্ড হারবার- রাজ্যের দক্ষিন ২৪ পরগনা মেদিনীপুরের দীঘায় বিস্তীর্ণ নদীতটে প্রতি বছর ইলিশ ভিড় করে। তথ্য বলছে, গত বছরেও ইলিশ উঠেছিল গড়ে ২০-৩০ টন। গত বছর দীঘায় জুলাইয়ে এক দিনে ইলিশ উঠেছিল ৫০ টন। আর এবার এক টন ইলশ পেতে কালঘাম ছুটছে।
বৃষ্টি না হওয়া যদি একটি কারণ হয়, তবে আরেকটি কারণ হলো ইলিশ ধরার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া। মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির অভিযোগ, সমুদ্রে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে হবে ১২০ দিন। তা না হওয়ায় ইলিশের জোগান কম পড়ছে। তাদের আরও অভিযোগ, ভারত, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে এক দেশ ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলে আরেক দেশ ধরে। ফলে আকাল থেকেই যাচ্ছে। একমাত্র তিনটি দেশ একযোগে ইলিশ ধরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেই কেবল এর সমাধান হবে।
একসময় পদ্মার ইলিশের জন্য হা-পিত্যেস হয়ে অপেক্ষা করত বাঙালি। ওপার বাংলা থেকে সেই ইলিশ আসা বন্ধ হয়ে গেছে দু-বছর। ফলে পদ্মার ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত এপারের বাঙালিরা। তবে বঙ্গে ইলিশের ঘাটতি মেটাচ্ছে মিয়ানমার। যদিও তার স্বাদ নিয়ে বাঙালি দ্বিধাবিভক্ত। তবে এত হতাশার মধ্যে আশার কথাও শোনাচ্ছেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, দু-এক দিনের মধ্যেই দক্ষিনবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হবে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অনেকে আবার বলছেন, এখনকার ঘাটতি পুষিয়ে ইলিশ মিলবে অক্টোবরে, দুর্গাপুজোর সময়ে। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বর্ষা শুরুর একমাস পরেও বাঙালি কেন জমিয়ে ইলিশ-ভাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা নিয়ে চর্চা আর চিন্তার শেষ নেই।