• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৯, ০৯:১২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৬, ২০১৯, ০৯:৫২ এএম

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ কুলাউড়ার ‘পালেরমোড়া’ 

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ কুলাউড়ার ‘পালেরমোড়া’ 
কুলাউড়ার ‘পালেরমোড়া’র নয়নাভিরাম দৃশ্য

চারপাশে হাওরের অথৈ জলরাশি। জলের ওপর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। সেই জলরাশির বুক ছিড়ে বেড়িয়ে এসেছে কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল আঞ্চলিক সড়ক। তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সুদৃশ্য পাকা সেতু। লাল-সাদা রঙে আঁকা সেতুটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশালাকারের একটি সামুদ্রিক জাহাজ। সেতুটির একটু আগে রয়েছে নৌকা ঘাট।

অথৈ জলরাশি ভেদ করে হরদম সেখানে যাতায়াত করছে ছোট-বড় সাইজের নৌকা। কেউ মাছ ধরার কাজে, কেউবা যাতায়াতের স্বার্থে নৌকাগুলো ব্যবহার করছেন। আবার হাওরের বুক ছিড়ে বের হওয়া সড়কে চলছে শত শত ছোট-বড় গাড়ির বহর।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ ‘পালেরমোড়া’। চলতি বর্ষায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইলে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে এমন সব নয়নাভিরাম দৃশ্য। উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নে অবস্থিত এই পালেরমোড়া। কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল সড়ক সংস্কার ও বিভিন্ন কালভার্টের রঙ দেয়ার পর থেকে এই জায়গাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে। তাই পালেরমোড়া এখন একটি দর্শনীয় স্থান। ইতোমধ্যে কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বয়সী বৃদ্ধ, যুবক, তরুণরা সময় পার করতে এখানে বেড়াতে আসছেন।

পালেরমোড়ায় নৌকায় চড়ে পর্যটকদের উল্লাস  

কুলাউড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত পালেরমোড়া সেতু। কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল আঞ্চলিক সড়কের মাঝখানে সেতুটি নির্মিত। সম্প্রতি সংস্কার ও নতুন রঙে ফুঁটে ওঠেছে এর সৌন্দর্য। চারপাশে অথৈ জলের ভিতর জেগে থাকা দৃষ্টিনন্দন পাকা সেতুটিকে তখন মনে হয় নোঙর করা কোন জাহাজ। 

অনেকের মতে, সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চেয়ে কোন অংশে কম নয় পালেরমোড়ার দৃশ্য। তাই বর্ষা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই পালেরমোড়ায় বাড়ছে ভ্রমণপিপাসুর ভিড়। 

পালেরমোড়া ঘাটে দাঁড়িয়ে উত্তর, পূর্ব বা দক্ষিণের যে কোন দিকে তাকালেই চোখে পড়বে সমুদ্রাকৃতির বিশাল হাওর। চোখের দৃষ্টিসীমায় হাওরের সীমানা শেষ হবে না। আপাতদৃষ্টিতে অমিল মনে হবে না হাওর আর সমুদ্রের আকার-আকৃতির মধ্যেও। দূরে ঘন-কালো মেঘের মতো দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামগুলোকে মনে হবে একেকটা দ্বীপ। আর এর মধ্য দিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে বর্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম সম্পর্কেও। লিলুয়া বাতাসের দিকে একটু কান পাতলে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের গর্জন ও শোনা যাবে হামেশাই। পাকা ঘাটের দু’পাশে দাঁড়ালে স্বচ্ছ জলে ভিজে যাবে দুই পা। মন-প্রাণ তখন নেচে উঠবে অপার আনন্দে। মন চাইলে পালেরমোড়া থেকে ভাড়ায় চালিত নৌকা নিয়ে হাওরের মাঝখানেও যাওয়া যায়। কুলহীন হাওরের মাঝখানে গেলে দেখা যায় মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকে মাঝিদের ছোট ছোট নৌকা।

হাকালুকি পাড় ঘেঁষা পালেরমোড়া এলাকার আশপাশে বানের পানি আসায় আরও পরিবেশটা আরও বেশি শান্ত ও মনোরম হয়ে ওঠেছে। এছাড়াও এলাকায় মানুষের আগমণকে আরও ত্বরান্বিত করতে স্থানীয়রা পালেরমোড়া কালভার্টের আশপাশে রঙতুলি, ফুলের গাছ রোপণ, আগত পর্যটকদের বসার জন্য বেঞ্চ তৈরিকরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।

পালেরমোড়ায় নৌকায় চড়ে পর্যটকদের উল্লাস  

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূর্ণতায় হাকালুকি পাড়ের পালেরমোড়া যেন এক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। বর্ষায় স্বচ্ছ জলের সঙ্গে মিতালি গড়ে সড়কে ঘেঁষা বাহারি প্রজাতির বৃক্ষলতার সবুজ গালিচা। হেমন্তে জল-ধূলোর এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। শীতে দেশী-বিদেশী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় নির্জন এই জায়গা। দূর থেকে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি দেখলে মনে হয় পানির উপর ভাসছে ।

সৌন্দর্যমণ্ডিত এই এলাকায় বৈকালিক আড্ডায় ঘুরতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। এমনকি সন্ধ্যা-রাতেও ঘুরতে আসছেন অনেকে। পর্যটকদের এই আসা-যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে এখানে বিভিন্ন দোকানপাট তৈরি হচ্ছে।

বলে রাখা ভাল, পালেরমোড়ার এ নৈসর্গিক সৌন্দর্য বর্ষাতেই অবলোকন করা যায়। বর্ষার পর শুকনো মৌসুমে হাওরজুড়ে চলে চাষাবাদ। তখন আর অথৈ জলের দেখা মিলে না। চলে না নৌকাও। বর্ষায় ভরা পূর্ণিমার রাতে পালেরমোড়ায় গেলে ফিরে আসতে মন চাইবে না কারও। তবে রাত যাপনের কোন সুবিধা নেই পালেরমোড়ায়। তবে সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার আগে কুলাউড়া শহরে একটি ডাকবাংলো এবং কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। হোটেলগুলোতে ভাত-তরকারি বা জলখাবারের কোনো অসুবিধা নেই।

পালেরমোড়া যাওয়ার উপায় : কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে কুলাউড়া থানার সম্মুখ এসে লোকাল সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে পালেরমোড়ার উদ্দেশ্যে যাওয়া যায়। এতে গাড়ি ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা খরচ হয়। আর রিজার্ভ সিএনজি অটো নিতে খরচ হবে ১২০-১৫০ টাকা।

বিএস