• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৮, ০৭:০২ পিএম

মনোনয়ন না পেয়ে ঘরের আগুনে জ্বলছে বিএনপি

মনোনয়ন না পেয়ে ঘরের আগুনে জ্বলছে বিএনপি
মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকদের গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ - ছবি: কাশেম হারুন

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির অশান্ত অবস্থা থামছেই না। মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকরা ঢাকার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় আঙিনায় বিক্ষোভ, ভাংচুরসহ ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

রোববার (৯ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে চেয়ারপারসনের কার্যালয় ফটকের সামনে দেখা যায়, মনোনয়ন বঞ্চিত কুমিল্লা ৪ আসনের (দ্বেবিদ্বার) ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির সমর্থকরা প্রতিবাদী স্লোগানে মুখর। কখনও রাস্তায় শুয়ে বা দাঁড়িয়ে কখনও দল বেঁধে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।

তাদের স্লোগান ছিল- অবৈধ মনোনয়ন, মানি না মানব না; মঞ্জুরুল ভাইকে মনোনয়ন- দিতে হবে দিতে হবে; দ্বেবিদ্বারের মাটি মঞ্জুরুল ভাইয়ের ঘাঁটি....।

কুমিল্লা ৪ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত করেছে জেএসডির মহাসচিব আবদুল মালেক রতনকে। মঞ্জুরুল সমর্থক ইসা হোসেন জাগরণকে বেশ উত্তেজিত অবস্থায় বলেন, কোথাকার কোন রতন, যাকে জীবনে এলাকায় দেখি নাই, তাকে দেয়া হলো নমিনেশন। অথচ মঞ্জুরুল ভাই সেখান থেকে চারবার এমপি হয়েছেন।

মঞ্জুরুল সমর্থিতদের পাশে দেখা যায়, ময়মনসিংহ ১০ আসন (গফরগাঁও) থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এবি সিদ্দিকুর রহমান সমর্থিতদের প্রতিবাদী অবস্থান। সিদ্দিকুর গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

এ আসন থেকে মনোনীত হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি নেতৃত্বাধীন এলডিপির সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ।

রাস্তায় শুয়ে সিদ্দিকুর সমর্থক আসিফ স্লোগান দিচ্ছিলেন। তিনি জাগরণকে বলেন, সিদ্দিক ভাই বিএনপির ত্যাগী নেতা, তিনি গফরগাঁওয়ে বিএনপিকে আগলে রেখেছেন। তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়নের কথা ভাবাই অন্যায়।

এছাড়া গত ৮ ডিসেম্বরও মনোনয়ন না দেওয়ায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও গোপালগঞ্জের সেলিমুজ্জামান সেলিমের কয়েক হাজার সমর্থক।

এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এহছানুল হক মিলন চাঁদপুর-১, তৈমুর আলম নারায়ণঞ্জ-১ এবং সেলিমুজ্জামান গোপালগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

এই কার্যালয়ে হামলা-ভাংচুরের আগে দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করেন কারাবন্দি এহছানুল হক মিলনের কর্মী-সমর্থকরা। পরে তারা সেখানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভের কথাও জানান।

চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে না দিয়ে এবার বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে মোশাররফ হোসেনকে।

তৈমুর আলম জাগরণকে বলেন, বিএনপির মনোয়ন পেতে যোগ্যতার চেয়ে গ্রুপিং-লবিয়িং-ই সবচেয়ে বড়। আমি কারও সাথে গ্রুপিং-লবিয়িং করিনি, তাই মনোনয়ন পাইনি। যোগ্যতার বিচারে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুও বেশ ক্ষুব্ধ। ৭ ডিসেম্বর বিকেলে তার এলাকা মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবিরকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর রাতেই ছোট বোন দেলোয়ারা বেগম পান্নাকে নিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে আসেন তিনি।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মো. শাহ মোয়াজ্জেমকে বিএনপি মনোনয়ন দেওয়ায় ৮ ডিসেম্বর ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত শেখ মো. আবদুল্লাহর সমর্থকরা। এদিন সকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নিমতলায় সড়ক দখল করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

একইদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকরা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারের নাম ঘোষণার পর পরই বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

এছাড়া গোপালগঞ্জ-১ আসনে সেলিমুজ্জামান সেলিম ও গোপালগঞ্জ-২ আসনে ডা. কেএম বাবরকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না দেওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও দুই প্রার্থীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী এফই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম-২ আসনে সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের (একাংশ) নেতাকর্মীরা। দুপুরে শহরের পুরাতন পোস্ট অফিসপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন হয়।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

 

আরএম/জেডএস