• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০১৯, ০৬:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৫, ২০১৯, ০৮:১৭ পিএম

একদিনে সড়কে ২১ প্রাণহানি, আহত শতাধিক 

একদিনে সড়কে ২১ প্রাণহানি, আহত শতাধিক 
দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পিকনিক বাসের সামনের অংশ - ছবি : জাগরণ

একদিনে সারাদেশে ৯ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ফেনী, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ভোলা, ময়মনসিংহ ও বরিশালে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

দৈনিক জাগরণের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

ফেনী সংবাদদাতা জানান, ফেনীর লেমুয়ায় ৪৫ যাত্রীসহ একটি পিকনিকের বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে ৬ জন নিহত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

আহতদের ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন সুজন মিয়া (৪০) ও শাহাদাত। নিহত সুজনের বাড়ি বিক্রমপুরের শিকদারবাড়ি। শাহাদাতের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর গ্রামে। বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। 

আহতরা হলেন- ঢাকার মিরপুরের আসলামের ছেলে আখতার (২২), জগদাশীর ছেলে অপু (২৫), শওকত হোসেনের ছেলে ইকবাল (৩৮), মো. সেলিমের ছেলে দুলাল (২৭), সকিনা (৬৫), নারায়ণগঞ্জের আদমজী এলাকার মনোয়ার হোসেনের মেয়ে আছমা (১৮), মুন্নার ছেলে ফয়সাল (২৩), সামছু উদ্দিনের ছেলে মুন্না (৫০), আজম (১৮), মো. সেলিমের ছেলে দুলাল (১৩), মাদারীপুরের আলী আছমতের ছেলে রিপন (৩০) ও টঙ্গীর আবদুল্লা শেখের ছেলে রিপন (৪০)। জানা যায়, বাসটি পিকনিকের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার যাচ্ছিল। 

ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান,  ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ যাত্রী। 

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার নওপাড়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি আতাউর রহমান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন- বাসচালক রওশন মিয়া, মীরাকুণ্ড নামে এক নারী ও অজ্ঞাত এক বৃদ্ধ।

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি চালকসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে ভৈরব কটিয়াদী মহাসড়কে আচমিতা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সিএনজি চালক তোফাজ্জল (৩০), কাদির ( ৩৫) ও ওমর (৪০) এবং আহতরা হলেন- পরিমল, সিরাজ, গিয়াস উদ্দিন ও মতি।  জানা যায়,  ড্রাইভার ছাড়া নিহত এবং আহতদের বাড়ি ইটনা উপজেলায়। তারা সকলেই ঈদ শেষে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য তারা নরসিংদী যাচ্ছিলেন। 

ঘটনার পরপরই চালক পালিয়ে গেলেও ঘাতক ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ। কটিয়াদী হাইওয়ে থানার কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপ ভ্যানের চাপায় ইসতিয়াক আহমদ (১৭) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সখীপুর-গোড়াই সড়কের বোয়ালী উত্তর পাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ইসতিয়াক আহমেদ পৌরসভার শাকিল আজাদের ছেলে। তিনি সরকারি মুজিব কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে ইসতিয়াক সখীপুর থেকে নলুয়া যাওযার উদ্দেশে রওনা হন। পরে  উপজেলার বোয়ালী উত্তর পাড়া এলাকার খালেক মিয়ার বাড়ি পাশে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান তার মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের কোনাবাড়ীতে ৩ বাসের সংঘর্ষে ২জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে সড়ক বিভাজকের ওপর একটি বাস উঠে যায়। এ সময় পেছনে থাকা আরও দুটি বাস এসে ওই বাসটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই ২জন নিহত হন।

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গোপালপুর এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্ত্রী সাথী বেগম (২৫)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত সাথীকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর নাম তুহিন মোল্লা (৩০)। তিনি জেলা সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের ঘোষেরচর উত্তরপাড়া গ্রামের আশরাফ মোল্লার ছেলে।

কাশিয়ানী থানার পুলিশ জানান, কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া থেকে তুহিন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে গোপালপুর এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার তাদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তুহিন নিহত হন।

ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় মাহেন্দ্র চাপায় পারভেজ (৮) নামে ১ শিশু নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের ভোলা অংশের ইলিশা ব্যারিস্টার কাছারি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত পারভেজ সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের সোনাডগী গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদশী সূত্রে জানা যায়, পারভেজ সকালে ব্যারিস্টার কাছারি এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ভোলাগামী একটি মাহেন্দ্র তাকে চাপা দেয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ইলিশা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই রতন কুমার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাহেন্দ্রটি স্পিডে থাকায় বাসটিকে সাইড দিতে গিয়ে শিশুটিকে চাপা দেয়। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। মাহেন্দ্র চালককে আটক করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ঢাকাগামী সোনার বাংলা পরিবহন ও শেরপুরগামী সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ২জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৫ জন। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে (১৫ আগস্ট) ঢাকা- হালুয়াঘাট মহাসড়কের ইমাদপুর মোদক বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, নিহতরা হলেন- শেরপুরের কালিবাড়ী চেঙ্গুরিয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে জায়েদ (৬) এবং  ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ  এলাকার সিরাজের (৪৫)। 

পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, শেরপুর অভিমুখী একটি সিএনজি এবং বিপরীত দিক থেকে আসা সোনার বাংলা পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে শিশু জায়েদ মারা যায়। আহতদের উদ্ধার করে ফুলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিরাজ (৪৫) তামান্না (২৬) বেগম (৩৫) মালেকা (৩০) ও নিহত শিশুর মা কাজলী বেগম (৩৬) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসকরা সিরাজকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফুলপুর থানার ওসি ইমারত হোসেন গাজী জানান, বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে যায়।

বরিশাল সংবাদদাতা জানান, বরিশালের বাবুগঞ্জে বাসচাপায় ৩০ বছর বয়সী এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হন তার সমবয়সী অজ্ঞাত পরিচয়ের অপর এক আরোহী। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নুতন হাট নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিবাকর চন্দ্র দাস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দুই যুবক মোটরসাইকেলের আরোহী ছিল। তারা একসাথে কোথাও যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বরিশাল-খুলনা রুটের একটি যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাসের সাথে মোটরসাইকেলটির সংঘর্ষ হলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় বাসের কোনো যাত্রী আহত হয়নি। তবে গুরুতর আহত দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক আবুল হাসানাত রাসেল তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি বলেন, ঘটনার পর পরই ঘাতক বিআরটিসি বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে তার আগেই চালক পালিয়েছে। তা ছাড়া নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হতে বিভিন্ন থানায় খবর পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তার মৃতদেহ শেবাচিমের মর্গে রয়েছে।

একেএস/এনআই

আরও পড়ুন