• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০১৯, ০৯:১৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০১৯, ০৯:১৯ এএম

কৌশল পাল্টে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা জঙ্গিদের 

কৌশল পাল্টে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা জঙ্গিদের 
ছবি: প্রতীকী

দুর্বল নব্য জেএমবি এখন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নামে দল প্রতিষ্ঠা করে কৌশল পাল্টে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, হত্যা, জনমনে ত্রাস, ভীতি ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করতে পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছিলো। সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, গত ২১ এপ্রিল শ্রীলংকায় আইএসের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহ পর ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের পিকআপ লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুটি ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার করেছে। দুটি ঘটনার কৌশল ছিল অভিন্ন। আগে বোমা পুঁতে রেখে পুলিশকে হামলার লক্ষ্য বানানো হয়। এতে বড় ক্ষতি না হলেও নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুটি মামলাই তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

এদিকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেফতাকৃত আবু তাইয়্যিবের (১৯) কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বই-পুস্তক ও মোবাইলফোন জব্দ করা হয়েছে।

এটিইউর পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) মাহিদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার আবু তাইয়্যিব কুমিল্লা সদরের দক্ষিণে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসার কিতাব শ্রেণির ছাত্র। তার দেয়া তথ্যে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পাঁচহাটি গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ব্যবহৃত অন্য একটি স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আবু তাইয়্যিব জানিয়েছে, তার সহযোগীসহ ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জার ও এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহার করে আল হরকাতুল জিহাদ ফিসাবিল্লাহসহ একাধিক গ্রুপ পরিচালনা করছেন। গোপনীয় ওই গ্রুপগুলোতে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, হত্যা, জনমনে ত্রাস, ভীতি ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করতে পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

মাহিদুজ্জামান জানান, এর আগে রাজধানীর রূপনগর এলাকা থেকে এটিইউর অভিযানে গ্রেফতার হওয়া আবু সালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া ও পল্লবী এলাকা থেকে প্রেফতার হওয়া শান্ত ওরফে মাহাদী হাসান তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাইয়্যিবের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। আবু তাইয়্যিবের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। মাহিদুজ্জামান আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবু তাইয়্যিব বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাইসহ গ্রুপের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

অপরদিকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের ফায়দা লুটতে আল্লাহর দল নামে সংগঠন পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সংগঠনটিতে নবী রাসূলদের নিয়মনীতি বহির্ভুত নানা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে বলেও জানায় র‌্যাব। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এসব কথা বলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারওয়ার-বিন-কাশেম।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাত আনুমানিক তিনটার সময় অভিযান চালিয়ে আল্লাহর দল ওরফে আল্লাহর সরকার নামে সংগঠনের ৪ সদস্যকে  গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সিরাজুল ইসলাম শাহরুল মৃধা (৩৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পেন ড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, সংগঠনের লিফলেট ও দাওয়াতপত্র এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্বলিত একটি তালিকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, এ সংগঠনটি অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত। তারা এরইমধ্যে বেশ কিছু ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রেখেছে। এমনকি এসব অর্থ দিয়ে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। তারা বর্তমানে যুদ্ধ অবস্থা চলছে বলে, ঈদ, কোরবানি, হজ পালন করে না, জুমার নামাজ আদায় করে না এবং প্রতি ওয়াক্তে শুধুমাত্র দু'রাকাত নামাজ আদায় করে। এমনকি ইসলামের কালেমার সাথে শেষ নবীর নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্ন মত রয়েছে। তারা মনে করে বর্তমান সময়ের জন্য জঙ্গি মতিন মেহেদী আল্লাহর বিশেষ দূত হতে পারে।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাদের সদস্য সংখ্যা ও জমানো অর্থ নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে অস্ত্র কেনার যে পরিকল্পনা ছিল তাদেরকে গ্রেফতারের কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মোহাম্মদ শাহজাহান, সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদউল্লাহসহ ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচশাইল এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ বিষয়ে পাঁশাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, একটি বাসায় গোপন বৈঠক চলাকালীন এই ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

গুলশানে হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর গত ৩ বছরে দেশজুড়ে একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ও গুলশান হামলার মূল হোতাসহ অন্তত ৭২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারপরও  কাটছে না জঙ্গি হামলার শঙ্কা। বিশেষ করে এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর দুটি স্থানে নতুন কৌশলে পুলিশের ওপর হামলার পর এ শঙ্কা আরও বেড়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সারা দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এদিকে জঙ্গি দমনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, গুলশান হামলায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) অনুসারী নব্য জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত। অব্যাহত অভিযানের মুখে সংগঠনটি শক্তি-সামর্থ্যে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বড় হামলার সামর্থ্য না থাকলেও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। তাই হামলার শঙ্কাও কাটেনি। এখন তারা চোরাগোপ্তা হামলা বা লোন উলফ (এক ব্যক্তি বা ছোট দল) ধরনের হামলার কৌশল নিতে পারে।

জঙ্গিদমন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বল নব্য জেএমবি এখন কৌশল পাল্টে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। 

এছাড়া রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে জঙ্গিবাদ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম। নব্য জেএমবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর দেশজুড়ে অব্যাহত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। তারা এখন ছোট ছোট দলে বিভক্ত। তাদের কোনো নেতা নেই। হলি আর্টিজানে হামলার আগে-পরে পর্যায়ক্রমে নব্য জেএমবির যেসব শীর্ষ নেতা ছিল তারা হয় অভিযানে মারা গেছে না হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে।

জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা প্রতিহিংসাপরায়ণ। এক দেশের ঘটনা অন্য দেশের জঙ্গিদের ওপর প্রভাব ফেলে। আইএসের পতনের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহিংস ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। বাংলাদেশে সেই অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে নিউজিল্যান্ডে হামলার পর প্রতিহিংসা থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। শ্রীলংকার হামলা থেকে তারা অনুপ্রেরণা পেয়েছে। তবে সফল হতে পারেনি। তিনি বলেন, জঙ্গিদের দমনে আমরা সফল। অনুকূল পরিবেশ পেলে বা সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে ঝুঁকি তৈরি হবে। এখন তেমন ঝুঁকি নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশের ধারনা, বোমা মিজানও ভারতে লুকিয়ে আছে। আর খুলনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা জেএমবি কমান্ডার হাফিজ মাহমুদ পুলিশের অপারেশনে মারা গেছে।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন