• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০৯:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০৯:৩৫ এএম

নাব্য সংকট

বন্ধ হয়ে যেতে পারে মোংলা-ঘষিয়াখালীর নৌ চ্যানেল

বন্ধ হয়ে যেতে পারে মোংলা-ঘষিয়াখালীর নৌ চ্যানেল
মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথের ড্রেজিং কার্যক্রম -ছবি : জাগরণ

মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথে নৌযান চলাচলের উপযোগী করে রাখতে প্রতিনিয়ত ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হয়। কিন্তু খননকৃত মাটি রাখার জায়গার অভাবে খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। চ্যানেলের দু’পাশে জমানো ড্রেজিংয়ের বালু সরিয়ে নেয়া না হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে আন্তর্জাতিক এ নৌপথের খনন কাজ। ফলে যেকোনো সময় নৌ চ্যানেল দুটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে মংলা বন্দরেও। তাই চ্যানেলটি সচল রাখতে মাটি সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান সংশ্লিষ্টরা।
  
মোংলা ঘসিয়াখালী চ্যানেলের দুই পাড়ে খননকৃত মাটি বারবার প্রতিস্থাপনের ফলে বেশ কয়েকটি স্থান টিলার মত উঁচু হয়ে গেছে। এতে ড্রেজিংকৃত মাটি প্রতিস্থাপন প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পশুর নদীর মুখ হতে জয়খা পয়েন্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় দুই পাড়ে মাটি ফেলার জায়গার অভাবে মাটি রাখা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ। যে কোনো মূহূর্তে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ওই এলাকার  চ্যানেলের তলদেশে পলি পড়ে দ্রুত ভরাট হচ্ছে। অপরদিকে চ্যানেলের অন্য পাশে ঘষিয়াখালী পয়েন্টে সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদীর দুই পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ এর বা সরকারি জায়গা না থাকায় মাটি ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খনন কাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ভরাটকৃত ডাইকের মাটি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে না পারলে ড্রেজিং কার্যক্রম যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হলে নৌযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে ভারত বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল ভুক্ত চ্যানেলটি। এর ফলে মোংলা বন্দর তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের শেলা নদীতে ফার্নেস অয়েলবাহী একটি ট্যাঙ্কার ডুবির পর সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিকল্প নৌ-পথের চিন্তা করা হয়। একই বছর পহেলা জুলাই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মোংলা-ঘষিয়ালী চ্যানেল ড্রেজিং শুরু করেন। ২০১৫ সালের ৬ মে নৌ-যান চলাচলের জন্য চ্যানেলটি খুলে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের হিসেব মতে, ওই চ্যানেল দিয়ে এ পর্যন্ত ছোট বড় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার নৌ-যান চলাচল করেছে। তাদের দাবি, বর্তমানে ভাটার সময় ১২ থেকে ১৪ ফুট ও জোয়ারের সময় ২০ থেকে ২৪ ফুট গভীরতায় পানি থাকে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ঘন মিটার মাটি খনন করা হয়েছে। প্রথম দিকে বিআইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ নেভীর মোট ৫টি ড্রেজার সার্বক্ষণিক মাটি খনন কাজ করলেও বর্তমানে ৩টি ড্রেজারে কাজ চলছে।  

মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী মো. শাজাহান বলেন, মাটি ফেলার জায়গা তৈরি টাইডাল বেসিন নির্মাণ, শাখা নদী ও শাখা খাল দ্রুত খনন, চ্যানেল পাড়ের স্তূপকৃত মাটি দ্রুত সরিয়ে নেয়া, বিশেষ করে মোংলা বন্দর এর পশুর নদীর থেকে জয়খা পর্যন্ত মাটি সরিয়ে ফেলা খুবই জরুরি। এটা না করা হলে ড্রেজিং কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। ৫ বছর ধরে দ্বিমুখী নৌ-যান চলাচলের জন্য চ্যানেল প্রশস্ত করণের কার্যক্রম একটুও এগোয়নি। 

পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জোটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ বাবুল জানান, সুন্দরবন সুরক্ষা, মোংলা বন্দর, জীববৈচিত্র্য ও এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা এবং মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার্থে চ্যানেলটির নাব্য বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য টাইডাল বেসিন ও নেভিগেশন লকসহ যা যা করণীয় সেটি করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নদী গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসর উপ-পরিচালক ডক্টর মমিনুল হক সরকার জানান, বর্তমান অবস্থায় চ্যানেলটির নাব্য ধরে রাখতে হলে পাড়ের স্তূপকৃত মাটি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। চ্যানেল সংলগ্ন নদী-খাল দ্রুত খনন সম্পন্ন, একাধিক টাইডাল বেসিন নির্মাণ, মোংলা থেকে জয়খা এলাকার বড় বড় খালে নির্মিত স্লুইসগেইট অপসারণ করতে হবে। জলাভূমিগুলো উন্মুক্ত করতে হবে এবং নেভিগেশন লক নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।   

বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী  (ড্রেজিং) মো. সাইদুর রহমান বলেন, মাটি রাখার জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হওয়া প্রয়োজন। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অবহিত করেছি। পলি ফেলানোর জায়গা না থাকলে ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

একেএস

আরও পড়ুন