• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৮:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৮:৩০ পিএম

যুবলীগ নেতা আনিস কলকাতায় আত্মগোপনে!

যুবলীগ নেতা আনিস কলকাতায় আত্মগোপনে!
যুবলীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান

অবৈধ উপায়ে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক যুবলীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে কলকাতায় দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশজুড়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই আনিস পাত্তা।  

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তাকে পরিবারের সঙ্গে ভারতের কলকাতা নিউ মার্কেট এলাকায় দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বাংলাদেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতায় সফররত একাধিক বাংলাদেশি  জানান, শনিবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে শপিং করতে দেখা গেছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। তার কিছুক্ষণ পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়া করা একটি গাড়িতে করে নিউ মার্কেট এলাকা ত্যাগ করেন কাজী আনিস।

দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়া পর পরই দেশ থেকে পালিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন কাজী আনিস। বিশেষ করে যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা কাজী আনিস। দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজী আনিসকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। 

অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক আলোচিত-সমালোচিত কাজী আনিস এক সময় যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ে পিয়নের চাকরি করতেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এরপর উপ-দফতর সম্পাদক এবং সর্বশেষ দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়ে নিজের জীবন বদলে ফেলেন। গত এক দশকে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান কাজী আনিস। তারপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, কাজী আনিস অবৈধ পথে একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক হয়েছেন। বিদেশে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন। মালয়েশিয়ার একাধিক ব্যাংকে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকা। দেশে বাড়ি-গাড়ির পাশপাশি হাউজিং ব্যবসাও রয়েছে তার। অভিযোগ রয়েছে, কোটিপতি আনিস যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়া কাউকেই পরোয়া করতেন না। তার বেপরোয়া মনোভাবে যুবলীগ নেতাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোণঠাসা ছিলেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগ সারা দেশে যেসব কমিটি দিত, সেগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে দিতেন আনিস। টাইপ করতে গিয়ে কোন জেলায় কে সভাপতি কে সম্পাদক তা নখদর্পণে চলে আসে আনিসের। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যে কোনও কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। আবার জেলা-পর্যায়ের নেতারাও কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের তথ্য বা সিদ্ধান্ত জানতে তাকে ফোন করতেন। এভাবে জেলা নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্য হয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসকে সবাই ‘ক্যাশিয়ার’ বলেই চেনে। তবে গত এক যুগে তিনি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছু যুবলীগ নেতার সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গী এই আনিস। ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে আনিসের। তবে ওই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। থাকতেন রাজধানীর ধানমণ্ডির ১০/এ সড়কের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে। এই ফ্ল্যাটটিও তার নিজের।

জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন ও যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করেই বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন কাজী আনিস। যুবলীগ নেতারা জানান, আনিসের দাপটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে টেকা দায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নেতা অভিযোগ করেন, আনিসের বিরুদ্ধে কথা বলে টেকা কঠিন। বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর সম্মেলন না করে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব আহ্বায়ক কমিটি বানানো ও দীর্ঘদিন বহাল থাকার সুযোগ করে দিতেন আনিস। আনিসের দাপটে পুরানো অনেক নেতা যুবলীগে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।

নেতা-কর্মীরা জানান, জি কে শামীম, খালেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়েন আনিস। তার সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্লাবে জুয়ার আসর চালানোসহ সব অপকর্মে জড়িত। 

এমএএম/এসএমএম

আরও পড়ুন