• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৮:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৮:২৩ পিএম

জাহালমের পর নয়ন বিনা দোষে ২৬ দিন ধরে কারাগারে

জাহালমের পর নয়ন বিনা দোষে ২৬ দিন ধরে কারাগারে
বিনাদোষে ২৬ দিন ধরে কারাগারে বাবুল হোসেন নয়ন - ছবি : জাগরণ

দুদকের ভুলে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের জাহালম দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। আবার একই জেলার সখীপুরের প্রতিমা বংকী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান বাবুল হোসেন নয়ন বিনা দোষে ২৬ দিন যাবৎ কারাগারে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নয়ন মুক্তি না পাওয়ায় ভেঙে পড়েছে অসহায় পরিবার।

সখীপুরের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে চলমান ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল নয়নের। কিন্তু ভাগ্য তার বিরূপ। এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় নামের মিল থাকায় গ্রেফতার হন নয়ন। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া হলো না তার। মিথ্যা মামলায় ২৬ দিন (২২ অক্টোবর পর্যন্ত) ধরে টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সখীপুরের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রী বাসাইলের চাপড়াবিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। চার দিন পর টাঙ্গাইল ডিসি লেকের পাশ থেকে পরিবারের লোকজন ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরিবারের চাপে মেয়েটি নয়ন নামের এক ছেলের সঙ্গে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানায়। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটির মা বাদী হয়ে প্রতিবেশী শাহজাহান আলীর ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে আসামি করে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।

পুলিশ নয়নকে গ্রেফতার করে মেয়েটির মুখোমুখি করলে মেয়েটি গ্রেফতার হওয়া বাবুল হোসেন নয়নকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। এ সময় নয়ন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রীকে চেনেন না এবং কক্সবাজারে যাননি বলে জোর দাবি করতে থাকেন। মেয়েটির অনড় অবস্থানের কারণে নয়নকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠালে আদালত পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সখীপুর থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও নয়ন বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করছিল। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় অধিকতর গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করি। মেয়েটির কাছ থেকে পাওয়া কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে চলে তদন্ত। পরে ওই হোটেলে দেয়া মোবাইল নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ঘটনার আসল হোতা নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে বাসাইল উপজেলার বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে। পরে গ্রেফতার হওয়া নয়ন মিয়া ওই ছাত্রীকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এদিকে ঘটনার প্রকৃত আসামি গ্রেফতারের ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও কলেজছাত্র বাবুল হোসেন নয়নের মুক্তি মেলেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার দ্রুত মুক্তির দাবি করা হয়েছে।

বাবুল হোসেন নয়নের বাবা শাহজাহান আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রায় এক মাস হয়ে যাচ্ছে; আমার নির্দোষ ছেলেটা জেল খাটছে। কষ্ট কইরা আমার ছেলেটারে পড়াইতাছি। কিন্তু মিথ্যা মামলার কারণে এবার পরীক্ষাটাও দিতে পারল না। ওর জীবনে বিশাল একটি কলঙ্ক লেগে গেল।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। আসল আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির নির্দোষ নয়ন মুক্তি পাবে।’

এনআই

আরও পড়ুন