• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০১৯, ০৮:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৯, ২০১৯, ০৮:৪৯ এএম

সাংবাদিক সাদাত উল্লাহকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের চেক বাতিল

সাংবাদিক সাদাত উল্লাহকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের চেক বাতিল
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুদানের চেক নিচ্ছেন সাদাত উল্লাহ

নিজেকে অসহায়, দুঃস্থ সাংবাদিক, আওয়ামী লীগার,প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন বীর বিক্রম পিএসসি’র এর ভাগিনা পরিচয় দিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বান্দরবান প্রতিনিধি চট্টগ্রামের লোহাগড়ার চরম্বা ইউপির সাবেক জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান সাদাত উল্লাহকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদানের ২ লাখ টাকার বাতিল করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,সাদাত উল্লাহর নামে দেয়া ট্রাস্টের অনুদানের চেক বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। চেক বিতরণ শেষে সর্বপ্রথম বিষয়টি কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদসহ কর্তাব্যক্তিদের নজরে আনেন চট্টগ্রামের বিএফইউজে-র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, এর প্রেক্ষিতে চেক বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ জানান,ইতিমধ্যে তার চেকের অনুকূলে বরাদ্দ ফান্ড বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি ব্যাংক থেকে উক্ত চেকের টাকা তুলতে পারবে না।

তিনি আরও জানান,তার দায়িত্ব নেয়ার আগে এ বিতর্কিত ব্যক্তির নামে অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার (ওই ব্যক্তি) বিষয়ে অনুষ্ঠান শেষে বিএফইউজে-র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজীর কাছ থেকে শোনার পর বিস্মিত হয়েছি। অফিস খোলার পর এ নিয়ে দাফতরিক তদন্ত হবে। তিনি জানান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম কিভাবে একজন দাগী ও চিহ্নিত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এক সময় বান্দরবানে অধ্যাপক পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। জামায়াত ঘরনার দৈনিক ইনকিলাব ও কর্ণফুলী পত্রিকার বান্দরবান প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে করতেন পত্রিকার এজেন্টের ব্যবসা। আর এর আড়ালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে জামায়েত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর হামলার জন্য সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে শিবির ক্যাডারদের নিয়ে এসে নেতৃত্ব দিতেন। আর সেই সাদাত উল্লাহ খোদ গণভবনে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে অনুদান গ্রহন এবং এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশ ভ্রমণের কারনে বান্দরবান আওয়ামী লীগে তোলপাড় শুরু হয়।

একসময় তিনি বান্দরবানে বসবাস করতেন,সেই সুবাদে জামায়াত ঘরনার দৈনিক কর্ণফুলি ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় কাজ করতেন, থাকতেন শহরের ফায়ার সার্ভিস এলাকায়। এরপর সাদাত উল্লাহ ২০১২ সালের ৩ মে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জামায়াতের প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি সেবার নির্বাচিত হন। চরম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শফিকুর রহমান সাদাত উল্লাহকে জামায়াতে ইসলামীর একজন ডোনার (অনুদানদাতা) হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। ২০১১ সালে সাংবাদিক কোটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদেশ সফর করে তিনি আলোচনায় আসেন।

আরো জানা গেছে, বান্দরবানে সরকারের কোন মন্ত্রী সফরে আসলে সাদাত ঠেলেটুলে মন্ত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে যেতেন,আর কাউকে দিয়ে সুকৌশলে ছবি তুলে রাখতেন। পরে বিভিন্ন জায়গায় এই ছবি প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগার সেজে এই ধরণের ফায়দা লুটতেন। বিষয়টি বান্দরবানে সাংবাদিকদের অজানা নয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জামাত-শিবিরের দায়িত্বশীল কোন পদে ছিলেন না বলে দাবি করে সাদাত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসগুলো মিথ্যা। তিনি এই অনুদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন বীর বিক্রম পিএসসিকে মামা সম্বোধন করে ধন্যবাদ জানান এবং ২০১১ সালে সাংবাদিক কোটায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরের সুযোগ করে দেন বলে জানান।

এদিকে জামায়াত শিবির ক্যাডার চরম্বা ইউনিয়ন জামায়াত থেকে নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাদাত উল্লাহ’র গণভবনে প্রবেশ ও দুঃস্থ সাংবাদিক হিসাবে অনুদানের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গ্রহনের ঘটনায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ঘটনার জোর তদন্তের দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদেক হোসেন চৌধুরী। 

বিএস 
 

আরও পড়ুন