• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০১:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০১:২৪ পিএম

চেইনম্যানের অঢেল সম্পদ, দুদকের মামলা 

চেইনম্যানের অঢেল সম্পদ, দুদকের মামলা 
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার চেইনম্যান নজরুল ইসলাম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার চেইনম্যান (বর্তমানে ফটিকছড়ি উপজেলায় সংযুক্তি) নজরুল ইসলামের অঢেল সম্পদের তথ্য। 

এর মধ্যে নজরুল ইসলাম ব্যাংক একাউন্টে ১০ কোটি টাকা ও তার স্ত্রীর একাউন্টে ৩ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এর বাইরে তাদের নামে আরও বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুদক। যার বর্তমান মূল্য শতকোটি টাকারও বেশি।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকালে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের (৪৮) বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। 

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী একে অপরের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সন্দেহজনক লেনদেন, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। 

এতে ২০১২ সালের ৪(২) ধারা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়। এর আগে নগদ অর্থ ও কোটি টাকার চেকসহ দুদকে হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নজরুল ইসলাম। সে কারাগারে থাকলেও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, সরকারি চাকরি করে প্রাপ্ত বেতনভাতা ছাড়া অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই এলএ শাখার চেইনম্যান নজরুল ইসলামের। যার জন্য তার নামে কোনো আয়কর নথিও নেই। সরকারি বেতন বাবদ যা পায়, তা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ে খরচ করেন তিনি। এর বাইরে তার কোনো সঞ্চয় নেই। 

তবে চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সে তিনটি দোকান থাকায় ২০০৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারকে কর দিয়ে আসছেন তিনি। যেখানে আয়কর রিটার্নে তিনি ব্যয় বাদে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ১০০ টাকা বৈধ আয় করেছেন বলে উল্লেখ করেন। 

তবে বাস্তব চিত্র উল্টো। শুধুমাত্র এলএ শাখায় কর্মরত থেকে তিনি গড়েছেন প্রায় ১৩ কোটি টাকার সম্পদ। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) নগরীর মুরাদপুর শাখায় নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে থাকা পাঁচটি একাউন্টে গত ১০ বছরে লেনদেন করেছেন ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৬ টাকা। এরমধ্যে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৮ টাকা উত্তোলন করলেও এখন পর্যন্ত স্থিতি রয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৮ টাকা।

এসব একাউন্টের মধ্যে ২০০৮ সালে নিজ নামে খোলা একটি একাউন্টে চলতি বছর পর্যন্ত জমা করেছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ২১১ টাকা। উত্তোলন করেছেন ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ টাকা। এখন পর্যন্ত এই একাউন্টে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৩ টাকা স্থিতি রয়েছে। 
চলতি বছরের জুন মাসে খোলা আরেকটি একাউন্টে জমা করেন ১ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ৯৭৩ টাকা। এরমধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ ৯৭৩ টাকা উত্তোলন করেন নজরুল। বাকি ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৯ টাকা স্থিতি আছে এই একাউন্টে। সবগুলো টাকাই ছিল ঘুষ বাণিজ্যের।

অন্যদিকে, স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে থাকা তিন একাউন্টের মধ্যে ২০১৫ সালে খোলা একটি একাউন্টে চলতি বছর পর্যন্ত জমা হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৬ টাকা। এরমধ্যে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৭ টাকা উত্তোলন করলেও এখন পর্যন্ত ওই একাউন্টে স্থিতি রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮২৮ টাকা। 

২০১৭ সালে খোলা আরেকটি একাউন্টে জমা হয় ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। মাত্র দুই বছরের মধ্যে এ একাউন্ট থেকে ৬০ লাখ ৯৪ হাজার ৬৩৩ টাকা উত্তোলন করলেও এখন পর্যন্ত তাতে স্থিতি রয়েছে ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩৬৬ টাকা। এছাড়া ২০১৮ সালে খোলা আরেকটি একাউন্টে জমা হয় ১ কোটি ২৯ লাখ ৬২ হাজার ২৮৬ টাকা। এরমধ্যে তিনি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৫ টাকা উত্তোলন করলেও বাকি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯১ টাকা এখন পর্যন্ত স্থিতি রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, নজরুল ইসলাম চেইনম্যানের কাজে নিয়োজিত থাকলেও তিনি থাকেন অর্ধকোটি টাকার বাসায়। ঘুরেন সাড়ে ২২ লাখ টাকার গাড়িতে। তার এক ছেলে লন্ডন থেকে সম্প্রতি এমবিএ করেছেন। আরেক ছেলে নগরীর বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ছেন। 

এরমধ্যে নগরীর ওআর নিজাম রোডের জুমাইরা পয়েন্টে ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাটটি স্ত্রীর নামে কিনেছেন তিনি। চিটাগাং শপিংয়ে থাকা তিন দোকানের মধ্যে দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত আনুকা ফ্যাশনও কেনা হয় স্ত্রীর নামে। যা তিনি ২০০১ সালে সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। একই বছরে মার্কেটের নিচতলার ৩৩ নম্বর ফ্যামেলি ফেয়ার নামের দোকানটিও ক্রয় করেন স্ত্রীর নামে। যার মূল্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। একই মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ৩৭ নম্বর দোকানটিও তিনি ২০১৮ সালে ৮৫ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেন। 

এছাড়া গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর মির্জাপুরে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। যাতে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে দুদককে জানায় নজরুল। এর বাইরে স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে একটি প্রাইভেট কার (চট্ট-মেট্রো-গ ১৩-২০১৫) ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল এসব তথ্য জানালেও এর বাইরেও তার ও স্ত্রীর নামে আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। যার জন্য ফের অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাবে দুদক।

গত ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার আনুকা ফ্যাশন থেকে দুদকের অভিযানে নগদ সাড়ে সাত লাখ টাকা ও কোটি টাকার চেকসহ গ্রেপ্তার হয় নজরুল ইসলাম। এসময় তার কাছ থেকে ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করে দুদক। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার অফিস সহায়ক তসলিম উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করে দুদক। তার কাছ থেকেও নগদ ৫৭ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

টিএফ


 

আরও পড়ুন