• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ১২:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ১২:৫৩ পিএম

মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা কর্ণফুলী ওয়াটার বাস সার্ভিস

মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা কর্ণফুলী ওয়াটার বাস সার্ভিস

চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থেকে বিমান যাত্রীদের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কম সময়ে পৌঁছে দিতে কর্ণফুলী নদীপথে চালু হতে যাচ্ছে ওয়াটার বাস। কিন্তু চালুর আগেই এই সার্ভিস মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে।  

বিশেষ করে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৪০০ টাকা মাথাপিছু ভাড়া আর যানজটের দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যা থেকে ঢাকার মতো কর্ণফুলী ওয়াটার বাস সার্ভিসও মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। 

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নগরের চেয়েও প্রবাসী বেশি চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে। যেখান থেকে বিদেশগামীদের একেকজনের সঙ্গে ৪-৫ জন করে আত্মীয়স্বজন বিমানবন্দরে আসে। যারা দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় মাইক্রো-হাইচ ভাড়ায় আসা যাওয়া করেন। সে জায়গায় তারা সদরঘাট থেকে মাথাপিছু ৪০০ টাকা করে দিয়ে আরও ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করে কেউ ওয়াটার বাস ব্যবহার করবে না। 
একইভাবে যেখান থেকে ওয়াটার বাস ছাড়বে সেই সদরঘাটও চট্টগ্রামের যানজটপূর্ণ এলাকা। তাছাড়া সদরঘাট যেতেও নগরীর কাপ্তাই সড়ক, হাটহাজারারী সড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সাবাজারসহ সবকটি সড়ক থেকে আসা বিমানযাত্রীদের কমপক্ষে ৫-৬টি যানজটপূর্ণ মোড়ের সম্মুখীন হতে হবে। যা সড়কপথে যেতেও একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাতে বিমানযাত্রীরা ওয়াটার বাসে সন্তুষ্ট হবে বলে মনে হয় না। 

তিনি বলেন, পর্যটন পিপাসু নগরীর বাসিন্দা বা ঢাকা থেকে কাজের সূত্রে আসা লোকজন ছাড়া এই ওয়াটার বাস ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখছি না। সর্বস্তরের যাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে না পারলে ওয়াটার বাস টিকবে না। ঢাকার বুড়িগঙ্গায়ও ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা হয়েছিল, কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ গুলশান থেকে রামপুরা পর্যন্ত একটা সার্ভিস আছে, ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। সেটা চালু আছে এবং খুব জনপ্রিয়। তাই ভাড়া ও যানজটের বিষয়টি পুনঃবিবেচনা না করলে এ সার্ভিস মুখ থুবড়ে পড়বে। 

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ওয়াটার বাসের টার্মিনাল সদরঘাটে না করে কালুরঘাট কিংবা শাহ আমানত সেতু এলাকায় করলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যেত। বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। এছাড়া জোয়ার-ভাটার সময় এই ওয়াটার বাস কিভাবে চলবে, বন্দর চ্যানেলে জাহাজ চলাচলে কোনো ঝুঁকি আছে কি না, এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া দরকার ছিল।

এদিকে, ওয়াটার বাস সার্ভিস পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড ও বেসরকারি এস এস ট্রেডিং। চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটে একটি টার্মিনাল ও পতেঙ্গায় একটি পন্টুন জেটি নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। যাত্রী উঠানামার জন্য টার্মিনাল ও জেটি নির্দিষ্ট ভাড়ার ভিত্তিতে ব্যবহার করবে এস এস ট্রেডিং।

এস এস ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবাব হোসেন বলেন, আমরা তিন বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা তো হুট করে এই প্রজেক্ট চালু করছি না। ওয়াটার বাস চলবে অকটেনে। ঘণ্টায় চলবে ৩০ নটিক্যাল মাইল বেগে। সর্বোচ্চ ১৮ মিনিটের মধ্যে আমরা সদরঘাট থেকে পতেঙ্গায় পৌঁছে দেবো। পতেঙ্গা থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও আমাদের। সব মিলিয়ে ৪০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। 

সাবাব জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি বাস দিয়ে চলবে এই সার্ভিস। জানুয়ারিতে আরও দুইটি বাস বহরে যুক্ত হবে। চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই ওয়াটার বাস সার্ভিস উদ্বোধনের ইচ্ছা আছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ এর উদ্বোধন করবেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, টার্মিনাল ও জেটি ব্যবহার বাবদ ওয়াটার বাস পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান বছরে ৭০ লাখ টাকা বন্দরকে পরিশোধ করবে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ২৫ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়বে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমাদের এমন চুক্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, নগরীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে পতেঙ্গা জেটি পর্যন্ত নৌপথের দূরত্ব ৮ নটিক্যাল মাইল বা ১৫ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন দুইটি ওয়াটার বাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হবে। দিনে ১১ বার করে দুটি বাস ২২ বার সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আসা-যাওয়া করবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রত প্রতিটি বাসে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২৫ জন। প্রতিটি বাসে লাগেজ বহন করা যাবে ২৫টি।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সারওয়ার-ই-জামান বলেন, বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২৮টি বিমান আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করে। গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজারের মতো যাত্রী বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া করে। আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন আসা-যাওয়া করে আরও কমপক্ষে দেড় হাজার। আর বিমানবন্দর সড়কে প্রতিদিন শুধু বিমানযাত্রী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে চলাচল করে কমপক্ষে এক হাজার যানবাহন। বিমানযাত্রী ও তাদের স্বজনদের যানবাহন ছাড়াও বিমানবন্দর সড়কে দৈনিক ৫ থেকে ৬ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, কারখানা, কনটেইনার ডিপোতে চলাচলকারী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইমমোভার, সরকারি-বেসরকারি অফিসের গাড়ি এবং সাধারণ গণপরিবহন আছে।

এই বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চাপ সামলাতে পারছে না একমাত্র বিমানবন্দর সড়কটি। ফলে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মূল শহরে পৌঁছাতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগছে। আবার মূল শহর কিংবা আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছাতে একই সময় যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে। বর্ষায় জলাবদ্ধতার মধ্যে যানজটে আটকা পড়ে ফ্লাইট ধরতে না পেরে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠে। সবকিছু বিবেচনায় এনে কর্ণফুলীতে ওয়াটার বাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

কেএসটি

আরও পড়ুন