• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৪:৫৯ পিএম

রাউজানের এমপি ফজলে করিমের পিতার নাম রাজাকার তালিকায়

রাউজানের এমপি ফজলে করিমের পিতার নাম রাজাকার তালিকায়
একেএম ফজলুল কবির চৌধুরী

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

আর এ তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রামের রাউজানের একেএম ফজলুল কবির চৌধুরীর নাম। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় ২০৩, ৫৯৫ ও ৬০৭ নম্বর ক্রমিকে তিন দফায় তার নাম রয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পিতা। ফজলে করিম চৌধুরী রাউজান আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টানা ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে, ১৯৯ ক্রমিক নম্বরে আছে তার ছোট ভাই একেএম ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাম। তাদের পিতার নাম খান বাহাদুর আবদুল জব্বার চৌধুরী। মায়ের নাম মধ্যযুগীয় মুসলিম মহিলা কবি রহিমুন্নেসার পৌত্রী বেগম ফাতেমা খাতুন চৌধুরানী। বাড়ি রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে। 

এছাড়া ফজলুল কবির চৌধুরী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা, প্রাদেশিক আইন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য। ফজলুল কাদের চৌধুরীও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন। 

ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী ট্রাইবব্যুনালের রায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হন।

উল্লেখ্য, রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেকর্ড সংগ্রহ করে রাজাকারদের তালিকা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। 

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক রাজাকার-আলবদরের রেকর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করেছি। 
তৎকালীন বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম থেকে এবং বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে। যাচাই-বাচাই করে ধাপে-ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।

ফজলুল কাদের চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী  
ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯১৯ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামের পিতা খান বাহাদুর আবদুল জব্বার চৌধুরীর ও মাতৃকূল মধ্যযুগীয় মুসলিম মহিলা কবি রহিমুন্নেসার পৌত্রী বেগম ফাতেমা খাতুন চৌধুরানীর ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন। 

তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ল কলেজ থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১৯৪২ সালে ভারতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন। 
তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা শাখার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে থাকা অবস্থায়ই তিনি ১৯৫৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরিষদ-সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে তিনি মুসলিম লীগের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।

ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৬২ সালে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভায় পরপর কৃষি ও পূর্তমন্ত্রী, শিক্ষা ও তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। 
কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে, সুপ্রিম কোর্টের এমন একটি রায়ের ফলে এসেম্বলিতে তার সদস্যপদ বাতিল হয়। 

১৯৬৩ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৯ নভেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ১৯৬৫ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ১৯৬৬ সালে তাকে মুসলিম লীগ (কনভেনশন) থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারের পতনের পর কনভেনশন মুসলিম লীগ বিভক্ত হলে ফজলুল কাদের দলের এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে দখলদার পাকবাহিনীর সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। চট্টগ্রামে রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়। (তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া)

ফজলুল কবির চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী 
এ.কে.এম. ফজলুল কবির চৌধুরী ১৯১৭ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামের পিতা– খান বাহাদুর আবদুল জব্বার চৌধুরীর ও মাতৃকূল মধ্যযুগীয় মুসলিম মহিলা কবি রহিমুন্নেসার পৌত্রী বেগম ফাতেমা খাতুন চৌধুরানীর ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন। 

১৯৭২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ৫৬ বছর বয়সে ঢাকাস্থ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মরহুম চৌধুরী সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলের নেতা এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। 

তিনি চট্টগ্রাম পোর্ট-ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট, মেরিন এন্ড মার্কেন্টাইল একাডেমির গভর্নর ও চট্টগ্রাম ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের কাউন্সিলর ছিলেন। 

১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী মরহুম এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর ছেলে।

কেএসটি

আরও পড়ুন