• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯, ০১:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯, ০১:৩৩ পিএম

প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রাজাকারের তালিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণীর নাম

রাজাকারের তালিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণীর নাম

সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী এবং তার ছেলে গেজেটেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডস্থ অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে লাল পতাকা হাতে বিক্ষোভ সমাবেশ পরবর্তী মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও ঠাকুমার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

ওই স্ট্যাটাসে তিনি বাবা ও ঠাকুমার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিযোগ করেন। তার দেয়া ওই স্ট্যাটাসটি স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

১৬ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে ডা. মনিষা চক্রবর্তীর দেয়া স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, ‘মানুষেল জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। দস্য প্রকাশিত রাজাকারের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে।

আমার বাবা অ্যাড. তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং-১১২, পৃষ্ঠা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নম্বর রাজাকার।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার ঠাকুরদা অ্যাড. সুধির কুমার চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার আঠুমা ঊষা রাণী চক্রবর্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

‘শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগ সরকারকে’।

‘আমার দল বাসদ আমাকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথানত না করাকে। মিছিল থেকে গ্রেফতার করে থানায় নির্যাতন করে ওরা বলেছিল যে আন্দোলন নে যা করি, নির্বাচনে যেন অংশ না নিই। রাজী না হওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজামিনযোগ্য মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করেছে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি’।

‘ভয় দেখিয়ে বা বিপদে ফেলে আমাদের কিছু করা যাবে না। অভুক্ত, অর্ধভুক্ত গরীব খেটে খাওয়া মানুষ আছে আমাদের দলের সাথে। আছে অনেক শুভাকাক্ষী। অতীতের মতো আজ এবং আগামীতে আপনাদের পাশে পাবো সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’

বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর দেয়া এমন ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর পরই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুক কমেন্ট্স এর মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। কমেন্ট্সকারীরা বলছেন, ‘তপন কুমার চক্রবর্তীর পরিবার একটি ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের তাদের অবদান অসামান্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই পরিবারের সদস্যদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তী ও তার মায়ের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাসদ নেতা-কর্মীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় সদর রোডস্থ অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

এ সমাবেশ থেকে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তী ও তার মায়ের নাম প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণীর স্ত্রীর নাম সম্বলিত রাজাকারের তালিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে লাল পতাকা হাতে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। টাউন হলের সামনে থেকে বের হওয়া মিছিলটি সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, চকবাজারসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফকিরবাড়ি রোডে বাসদ অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

কেএসটি

আরও পড়ুন