• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২০, ০৯:৫৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৯, ২০২০, ০৯:৫৮ এএম

চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে ঝলসে যাওয়া বানরগুলো

চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে ঝলসে যাওয়া বানরগুলো

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের কভারবিহীন তারে জড়িয়ে ঝলসে যাওয়া বানরগুলো চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছে।

ফুলবাড়ীয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর। ঐ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে ৩ শতাধিক বানর। এ বনাঞ্চলে অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কভারবিহীন তারেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎসংযোগ। সেই খোলা তারে এরই মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে প্রায় ১০টি বানর। তাদের মধে একটি মারাও গেছে। যেগুলো বেঁচে আছে সবগুলো চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছে। 

স্থানীয় দর্শনার্থীরা বনে ঘুরতে এসে বিদ্যুতের তারে ঝলসে যাওয়া বানরগুলোকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বানরগুলোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে দৈনিক জাগরণে সংবাদ  প্রকাশের পর বিদ্যুৎ বিভাগের টনক কিছুটা নড়লেও খোলা তারেই বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ। বনবিভাগ ও স্থানীয়দের দাবির মুখে পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ লাইন কিছুটা সংস্কার করলেও বানরের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েই গেছে।

সন্তোষপুর বনবিটে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যুতে মুখমণ্ডল ঝলসে যাওয়া একটি বানর খেতে পারছে না। কোন কিছু খেলে গলা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপর একটি বানরের সামনের পা দুটি বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে যাওয়ায় মাংস খসে পড়ে হাড় বেরিয়ে গেছে। বানরের এমন দূরাবস্থা দেখে দর্শনার্থীরা ব্যথিত হচ্ছেন। 

দেখা গেছে, ৫ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইনের বানর অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে ৫/৬ টি খুঁটিতে কিছুটা পরিবর্তন করে দুই তারের মধ্যবর্তী স্থানে বেশি জায়গা রেখে পুনরায় বিদ্যুৎসংযোগ দিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিস। এতেও বানরের বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঝুঁকি থেকে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বন কর্মকর্তা। 

বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বানরদের থামানো যাচ্ছে না। এরা বিদ্যুতের তারে লাফালাফি করছে প্রতিনিয়ত। বানর সংঘবদ্ধ প্রাণি। কোনো বানর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে দলবেঁধে বনের অন্য বানরগুলো এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে ছুটে যায় সেখানে।

বন বিভাগ জানায়, এই বনে প্রায় তিনশ বানর রয়েছে। বানরগুলোর বিচরণ ক্ষেত্র পুরো বন এলাকা হলেও সন্তোষপুর বনবিট অফিসের কাছাকাছি তারা বেশি অবস্থান করে। সম্প্রতি পল্লীবিদ্যুৎ বনের ভিতর দিয়ে ৫ কি.মি. নতুন লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুৎসংযোগ দেয়।

সন্তোষপুরের ফলচাষি আয়ুব আলী জানান, বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে উঠে তারে ঝুলে খেলার সময় বানরগুলো বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হচ্ছে। বানর সংবদ্ধ প্রাণি হওয়ায় এক বানর আহত হলে সব বানর ওখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে একের পর এক বিদ্যুতায়িত হয়। সংযোগ দেয়ার ৭ দিনের  মধ্যে ১০/১২টি বানর আহত হয়েছে। আহত বানরগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাচল করছে। তাদের মধ্যে একটি মারাও গেছে। তাই আহত অন্য বানরগুলোকে বাঁচাতে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

স্থানী দোকানি জয়নাল বলেন, বিদ্যুতায়িত হয়ে মুখ ঝলসে যাওয়া একটি বানর প্রতিদিন আমার দোকানে কলা খাওয়ার জন্য বসে থাকত। প্রথম প্রথম ৭/৮টি কলা খেয়েছে। এখন দু’টোর বেশি কলা খেতে পারছে না। হয়তো মুখের ক্ষত বেড়ে গেছে। সামনে হাত দুটো ঝলসে যাওয়ায় কোন কিছুই হাত দিয়ে তুলে খেতে পারছে না।

সন্তোষপুর বনবিট কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, কলার ভেতর এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে আহত বানগুলোকে। তবে বানরগুলো কলা খেয়ে ভেতরের ট্যাবলেটটি ফেলে দিচ্ছে।

ফুলবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম অনিতা বর্মন বলেন, বানর বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হওয়ার খবরে ওপরের এসটি লাইন বন্ধ করে দেয়াসহ নিচের দুই তারের দুরত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আর কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।

কেএসটি