এক দশক আগেও আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি অবহেলিত জাতের নাম ছিল আশ্বিনা। রান্না বা আঁচার বানানো ছাড়া আর কোনো কাজেই লাগতো না এই জাতের আম। তাই এ জাতের আমের তেমন পরিচর্যাও করতেন না চাষীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই আমের কদর বেড়েছে। 

বর্তমানে আমের মৌসুম প্রায় শেষ। প্রচলিত বাণিজ্যিক জাতের আম শেষ হয়ে গেছে তিন থেকে চার সপ্তাহ আগেই। তবে এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের আমের বাজার ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে গমগম করছে। গত কয়েক বছর ধরেই এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে বাজারে। শুধুমাত্র আশ্বিনা আম নিয়েই চলছে বাজার। কৃষি বিভাগ ও আম চাষী-ব্যবসায়ীরা ও  বলছেন- আগে আশ্বিনা আমের কোনো পরিচর্যা না থাকলেও বর্তমান বাজারে অন্য জাতের আম না থাকায় এখন এর পরিচর্যা বেড়েছে। এখন চড়া দামেই বিক্রি হয় এই আম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম বাজার ঘুরে দেখা গেল, সারি সারি ভ্যানগাড়িতে শুধু আশ্বিনা জাতের আম। প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ আম বিক্রি হচ্ছে কানসাটসহ জেলার অন্যান্য বাজারগুলোতে। দামও অনেক চড়া।

শিবগঞ্জের আম চাষী সেলিম রেজা জানান, আশ্বিনা আমটা জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো এই সময়ের অন্য কোনো আম বাজারে আর থাকে না। সেই সঙ্গে আশ্বিনা আম দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। যে কারণে এই আমের চাহিদা অনেক বেশি। এই আম কয়েকদিন রেখে খাওয়া যায়, স্বাদও থাকে অটুট।

কানসাটের আম বাজার ঘুরে কথা হয় শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের নাককাটি গ্রামের আম ব্যবসায়ী মইন আলী সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে এই আমের পরিচর্যা দুইভাবে হয়ে থাকে। এখন আমে ছোট থেকে ব্যাগিং করে আর ব্যাগিং ছাড়া পরিচর্যা করা হয়। 

তিনি আরও জানান, প্যাকেটের আমের স্বাদ একটু কম আর প্যাকেট ছাড়া আমের স্বাদ বেশি। তাই ব্যাগিং করা আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ আড়াই হাজার টাকার উপরে। আর ব্যাগিং ছাড়া আমের দর প্রতি মণ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, জেলার ৩৩ হাজার ৮৫ হেক্টর আম বাগানের ১০ শতাংশের বেশি আশ্বিনা জাতের আম। আশ্বিনার চরিত্রগত বৈশিষ্ট হলো ভাদ্র মাস থেকেই এই আম পাকতে শুরু করে। অন্যান্য জাতের আমগুলো একসঙ্গে বাজারে ওঠে, তাই ওই সময় আমের দাম পাওয়া যায় না। তবে আশ্বিনা আম যখন ওঠে, তখন আর কোনো জাত বাজারে থাকে না। তাই ভালো দাম পাওয়া যায়। বাজারে বাণিজ্যিক জাতের আম না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে।

এসইউ