• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২০, ০৬:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১১, ২০২০, ০৬:০০ পিএম

খরচের তুলনায় লাভ বেশি, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

আগাম সবজির দখলে বাজার

আগাম সবজির দখলে বাজার

মহামারি করোনার মহাবিপর্য এবং স্থায়ী বন্যার মধ্যেই ঠাকুরগাঁওয়ে লাউ, করলা, বেগুন, কায়তাসহ বিভিন্ন শীতকালীন আগাম সবজি ঠাকুরগাঁওয়ের আড়ত বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আর খেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ এলাকার কৃষকদের। ফলে প্রতি বছরই চাষিরা ঝুঁকছেন আগাম সবজি চাষের দিকে।

এদিকে উৎপাদিত শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে উঠতে শুরু করায় এসব সবজি কিনতে আড়ত বাজারে ভিড় করেছেন জেলা শহরগুলোর পাইকাররাসহ স্থানীয়রা। প্রতিদিন এ জেলার সবজি যাচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি করে কৃষকও বেশ ভাল দাম পাচ্ছেন।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর ৫ উপজেলায় মোট ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে যা থেকে ফলন হবে প্রায় ১৬.৫০ মেট্রিক টন সবজি। 

এদিকে জেলার আড়ৎ বাজারে পাইকারি সবজির বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকে শত শত কৃষক তাদের উৎপাদিত আগাম জাতের শাকসবজি নিয়ে বাজারে বিক্রির জন্য আসছেন। কেউ এনেছেন লাউ, কেউ বরবটি, শিম, করলা, লাল শাক, মুলা, শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাধাঁকপিসহ শীতকালীন আগাম শাক-সবজি। আর বিভিন্ন এলাকা থেকে শাক-সবজি কেনার জন্য বাজারে ভিড় করছেন সাধারণ ভোক্তাসহ পাইকাররা। এখানকার সবজি গুণে-মানে ভালো হওয়ায় সারাদেশে এই সবজির চাহিদা রয়েছে। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে এই সবজির বাজার চলে ১০টা পর্যন্ত। এরপর ভ্যান বোঝাই করে সবজি চলে যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় বাজারগুলোতে।পৌর বাজারের পাইকারি আড়ৎগুলোতে ফুলকপি ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা,বাঁধাকপি ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ২০-২৫ টাকা। ধনিয়া পাতা কেজি প্রতি ৪-৫০ টাকা, শিম ৭০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৫০-৬০ টাকা, লাল-শাক ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম কিছুটা কমেছে বলেই জানিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা।

ঠাকুরগাঁও কালিবাড়ী বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী পরিমল বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে ওঠার কারণে ক্রেতারা নতুন সবজি পেয়ে সাচ্ছন্দের সাথে নতুন সবজি কিনছে, তাই চাহিদাও রয়েছে বেশ। সবজির দামও ভাল রয়েছে। 

রহিমানপুর গ্রামের সোহরাব আলী বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছি। আগাম চাষ করা সবজিগুলো বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছি তাই বেশ ভালো লাগছে। একই কথা জানান,কাদেরুল ইসলাম। তিনি দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপির ১০ হাজার চারা রোপণ করেছিলেন, দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রিও শুরু করেছেন। তবে দুই বিঘা জমিতে তার খরচ ৫০ হাজার টাকা হলেও তিনি কমপক্ষে এক লক্ষ টাকার বাঁধাকপি বিক্রি করবেন এমনটাই আশা করছেন তিনি।একই ভাবে জানান কৃষক জাফর ইসলাম জানান তিনি আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন,আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল ফলনও হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক বেশি দামে (১৬০০ টাকা মণ দরে) কপি বিক্রি করতে পেরে সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে তার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান,এবার ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তারপরো আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে এই এলাকার কৃষক আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির বাম্পার ফলন । এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর তাই ফলন বেশি হয়। এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বরিশালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তিনি আরো বলেন সবজি ক্ষেতে যাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করেই ফলন বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়েও সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা।