• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২০, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে লাঙ্গল-মই

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে লাঙ্গল-মই

হিমালয়ের কোলঘেষা উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে চিরচেনা সেই গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র।

দেশের কৃষি প্রধান অন্যান্য অঞ্চলের মতো এ জেলায় এক সময় গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেতো শত শত কৃষক লোহার ফালা দিয়ে তৈরি করা ধারালো লাঙ্গল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেধে দিয়ে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙ্গল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাই করা যেতো না। অথচ গরু-লাঙ্গলের সাথে কৃষকের সেই মিতালীর দৃশ্য এখন বিরল। 

যুগের পরিবর্তন আর বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির কারণে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। এখন আর কৃষক কাক ডাকা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে জমি চাষ করতে মাঠে যায় না। কৃষক এখন তার সুবিধামত দিনের যে কোন সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ‘ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে সত্য। কিন্তু ফসলের গুণগতমান এবং স্বাদ কমে গেছে। তাছাড়া জমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

প্রবীণ কৃষকরা জানান, এক সময় ঠাকুরগাঁও জেলায় গ্রামঅঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে প্রতিটি ঘরেই ছিল গরুর লালন-পালন। এই গরুগুলো যেন পরিবারের এক একটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে একরের পর একর ভূমি চাষ করা হতো। তারা আরো জানান, যাদের গরু কিংবা হাল ছিলো না তারা জমি চাষের জন্য ‘প্রশিক্ষিত’ জোড়া বলদের মালিককে সিরিয়াল দিতো জমি চাষ করে নেওয়ার জন্য। হাল মালিকেরা সময়মতো জমি চাষ করে দিতো। এতে করে চাষের মৌসুমে তাদের উপরি আয়ের ব্যবস্থা হতো।

সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক জিতেন্দ্রনাথ বলেন, জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে তার লাঙল-জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। হালচাষের দীর্ঘ স্মৃতি হাতড়ে এই বয়োবৃদ্ধ বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৫ বছর হবে ওই সময় আমার বাবা মারা যায়। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় তখন থেকে কাকাদের সঙ্গে হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো ওই বলদ গরুগুলো। ১ জোড়া বলদ, লাঙ্গল-জোয়াল, মই, ছড়ি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখের টোনা (কামইর) লাগতো আমাদের হাল চাষ করার জন্য। এখন প্রায় কয়েক বছর হলো, বয়স আর অসুস্থতার জন্য হাল চাষ ছেড়ে দিয়েছি। মাহেন্দ্র ও ট্রাক্টরের আগমনে এখন তো আর গরু দিয়ে হালচাষ হয় না বললেই চলে। এখন সেই পুরনো স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে করে সময় পার করছি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শিক্ষক প্রফুল্ল রায় বলেন, গরু দিয়ে হাল চাষ গ্রামীণ সমাজের কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন তা বিলুপ্তির পথে। গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখা এখন প্রায় দুরূহ। কারণ মানুষ এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। তবুও কিছু কিছু স্থানে আমাদের কৃষকদের এই ঐতিহ্য লালন করতেই অনেকে তা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে যান্ত্রিকতার দাপটে ঐতিহ্যের এসব কৃষি উপকরণ কৃষকের ঘরে কতদিন টিকে থাকে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

জাগরণ/জেসি/এমআর