• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৩:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৪:০৮ পিএম

১৫ লাখ টাকার গাড়ি দিয়ে শিক্ষককে সম্মাননা শিক্ষার্থীদের

শিক্ষকরা সারা জীবন শিক্ষকতা শেষে বিদায়বেলায় সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উপহারস্বরূপ লাঠি ও ছাতা পেতেন। সেখানে এবার শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে দিলেন ১৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি।

সম্প্রতি বরগুনার সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের চড়কগাছিয়া এতিম মঞ্জিল আলিম মাদ্রাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ মাওলানা সুলতান মাহমুদ। তাকে বিদায় জানাতে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে একটি বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করে আল মাহমুদ প্রাক্তন ছাত্র ফোরাম। সেই অনুষ্ঠানে প্রিয় শিক্ষককে গাড়ি উপহার দেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বলেন, অধ্যক্ষ সুলতান মাহমুদ দীর্ঘ দিন প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো ভালোবেসে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। তার বদৌলতেই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে দেশের সেরা ফলাফল অর্জনের গৌরব লাভ করেছে।

প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভোলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. জাকারিয়া। তিনি বলেন, “মাওলানা সুলতান মাহমুদ এমন একজন শিক্ষক, যিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ভালোবেসেছেন মায়ের মতো করে। শিক্ষার্থীদের শুধু পড়াশোনাই না, সন্তানের মতো যত্নে লালন করে আদর্শ, নৈতিকতা ও মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। মহান এই শিক্ষকের বিদায়ে আমরা তাকে উপহার দেব এমন কিছু নেই। তবু সবার পরামর্শে তাকে আমরা একটি গাড়ি উপহার দিয়েছি।”

মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের রাজাপুর শাখায় ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, “অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাডারে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কর্মরত রয়েছেন।”

হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হারুন-উর-রশীদও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বলেন, “স্যারকে আমার পিতার মতো শ্রদ্ধা করি। তিনি আমাদের সন্তানের মত করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। মাদ্রাসাটিকে একদিকে যেমন টেনে তুলেছেন পরম যত্নে, তেমনি শিক্ষার্থীদের ভালো মন্দে সবসময় পাশে থেকেছেন। আমরা স্যারের জন্য গর্বিত।”

অনুষ্ঠানের আয়োজক আল মাহমুদ প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের সভাপতি আবু হানিফ নেসারী বলেন, “আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ নিয়ে স্যারকে ১৫ লাখ টাকায় গাড়িটি কিনে উপহার দিয়েছি। স্যারের কারণে মাদ্রাসা ও শিক্ষার্থীরা আজ আলোকিত। স্যারকে আমাদের দেওয়ার কিছুই নেই। শুধু সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি।”

বিদায়ী অধ্যক্ষ সুলতান মাহমুদ বলেন, “একজন শিক্ষকের জন্য পরম পাওয়া একজন ছাত্রকে মানুষ হিশেবে গড়ে তোলা। এই প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষার্থীদের আমি সন্তানের মত দেখেছি। মাদ্রাসাটিকে আমি মায়ের মতো মনে করেছি। বিদায়ের এ ক্ষণে আমি অভিভূত, আমার ছাত্ররা দেশের কল্যাণে নিবেদিত হয়েছে।”  

চড়কগাছিয়া এতিম মঞ্জিল আলিম মাদ্রাসাটি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত নলী চরকগাছিয়া এলাকায় অবস্থিত। ১৯৭৫ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সুলতান মাহমুদ মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৪২ বছর ২ মাস ধরে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে সবশেষ অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নেন।