• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০১৯, ০৯:২৮ এএম

পাহাড়ি অঞ্চলের কমলার চাষ এখন নাটোরে

পাহাড়ি অঞ্চলের কমলার চাষ এখন নাটোরে

 

পাহাড়ি অঞ্চলের কমলা চাষ করা হচ্ছে নাটোরের বাগাতিপাড়ায়। মাল্টা চাষে সফলতা আসার পর সমতলভূমিতে এই প্রথম কমলা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উপজেলার রহিমানপুর গ্রামের কৃষক সাজেদুর রহমান। পরীক্ষামূলক কমলা চাষে সফলতা আসার পর এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত কমলা এখন বাজারেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

কমলা চাষি সাজেদুর রহমানের এই সফলতাকে পুঁজি করে গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাতের কমলা চাষ ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। 

কমলা চাষী সাজেদুর রহমান জানান, ২০১৬ সালে দিনাজপুর থেকে তিনি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় কমলার গাছ রোপন করেন। পরে ওই গাছগুলোতে আশানুরূপ কমলার ফলন হয়। পরে বাণিজ্যিক ভাবে কমলা চাষের জন্য বাড়ির পার্শ্বে দেড় বিঘা জমি লিজ নেন তিনি। সেখানে ৪০০শ কমলার গাছ রোপন করেন।


 
সাজেদুর রহমান বলেন, কমলা সাধারণত উঁচু এবং পাহাড়ি এলাকার ফল। যেহেতু বাগাতিপাড়া উপজেলা তুলনামূলক উঁচু হওয়ার কারণে আমি প্রথম ঝুঁকিটা নেই। সফলতাও পেয়েছি। ৪০০শ গাছেই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বছরের অন্তত ২বার কমলা পাওয়া যাবে। এখানকার উৎপাদিত কমলা অনান্য এলাকার চাষ করা কমলার মতো স্বাদ ও গন্ধে এক। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে কমলা চাষ করার ইচ্ছা আছে।
 
উৎপাদিত কমলার স্বাদ সম্পর্কে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মাসুম বলেন, মিষ্টির সঙ্গে একটুখানি টকের মিশ্রন রয়েছে। বাগাতিপাড়ায় উৎপাদিত কমলাকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে। পাহাড়ের কমলা এখন সমতলে চাষ হচ্ছে এবং এর স্বাদ বাজারের প্রচলিত কমলার প্রায় কাছাকাছি। বর্তমানে কমলা চাষের জন্য এই অঞ্চল নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে।
 
কমলার বাগান ঘুরে দেখা যায়, ভরা মৌসুমে গাছে গাছে কমলার সমারোহ। ফলের ভারে নুয়ে পড়ছে প্রতিটি গাছ। প্রত্যেক গাছে ছোট বড় মিলিয়ে অর্ধশত কমলা শোভা পাচ্ছে। 

২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে বছরের দ্বিতীয় দফায় কমলা বিক্রি শুরু করেছেন সাজেদুর রহমান। কমলা বিক্রি চলবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে অন্তত ৮০ মণ কমলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এর আগে চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রথমবারের মত কমলার ফলন পাওয়া যায়। ওই সময় প্রায় ১০ মণ কমলা বিক্রি করেন তিনি। সাজেদুর রহমানের বাগানে এখন ক্রেতাদের সমাগম। নাটোরের আব্দুলপুর থেকে এসেছেন ফল ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক। সাজেদুর রহমানের বাগান থেকে ৬ মন কমলা কিনেছেন।
 
আব্দুল খালেক বলেন, আমি এ বাগান থেকে ৩/৪ দিন পর পর ৫ থেকে ৬ মণ করে কমলা কিনছি। দামও কম পাচ্ছি, এতে করে লাভ ভাল হচ্ছে। 

আরেক ক্রেতা নাটোর স্টেশন বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী নান্টু মিঞা বলেন, এ কমলা ভারতের নাগপুর এলাকার জাত। উপরে সবুজ, ভেতরে খানিকটা সাদাটে। বাগান থেকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে কিনে বিক্রি করি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, ৫ ফুট উচ্চতার কমলা গাছের পরিচর্যায় তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। এর পরিচর্যা অনেকটা পেয়ারা গাছের মত। এক একটি গাছ ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে একটানা ফল দেয়। প্রতি মৌসুমে এক গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ কেজি কমলা পাওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, অর্গানিক কমলা উৎপাদন এবং প্রচারণার মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ উপজেলায় মাল্টা চাষে সফলতার পথ ধরে এবার কমলা চাষেও সফলতা আসবে বলে মনে করছি। 

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অপ্রচলিত ফল ও ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে নাটোরের কৃষি। জেলায় কমলা চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগ সব রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বাজারে চাহিদা থাকায় সম্ভবানাময় ফল হিসেবে ভবিষ্যতে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও কমলার চাষ সম্প্রসারিত হবে। এতে মানুষের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।

এএস/