• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২১, ০৪:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৮, ২০২১, ০৪:১৮ পিএম

প্রেরণাদায়ী এক জয়িতার গল্প

প্রেরণাদায়ী এক জয়িতার গল্প

আমাদের সমাজে অনেক নারী রয়েছে যারা নানা বঞ্চনা, অবহেলা-নির্যাতন প্রতিহত করে সফল হয়েছেন। কেবল নিজের অদম্য শক্তিকে সম্বল করে জয়ী হয়েছেন বারবার। তেমনি একজন হলেন শেরপুরের  শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন। 

জীবনযুদ্ধে চরম প্রতিকূলতা পেরিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন নিজ পেশায়, ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন সম্মানে। শিক্ষকতা শুরু করেন ২০০৩ সালে। বর্তমানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন শেরপুর উপজেলা সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  

শাহনাজ পারভীন জানান, মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। লড়াই করেছেন জীবনের সাথে। কখনো কখনো পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। 


তারপরও থেমে থাকেননি তিনি। বিজ্ঞান বিভাগে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে প্রথম বিভাগসহ বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। নিজে পড়াশোনার পাশাপাশি কষ্টার্জিত অর্থে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেন ছোট বোনদের। যাদের একজন শিক্ষক আর অন্যজন চিকিৎসক। শাহনাজ পারভীন বড় মেয়ে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । 

তবে শুধু পরিবারের সদস্যদের জন্য নয় কাজ করেছেন সমাজের অসহায় শিশু ও নারীদের জন্য। 

শাহনাজ পারভীন জানান, শিক্ষা জীবন থেকেই অসহায় পথ শিশু, সুবিধাবঞ্চিত নারী, অবহেলিত মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করার জন্য দিনরাত সংগ্রাম করেছেন তিনি। সুবিধা বঞ্চিত পথ শিশু, নিরক্ষর কিশোর, শ্রমিকদের মাঝে শিক্ষার আলো নিশ্চিত করে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুবিধা বঞ্চিত, শ্রমজীবী ও  প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 

এই বিদ্যালয়ের যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ ও পরীক্ষার ফি, বিনামূল্যে টিফিন দেওয়া হয়। এছাড়াও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। 

বাল্যবিবাহ মুক্ত, জেলার বিভিন্ন এলাকার বিধবা, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা ২০০ জন নারীকে ব্লক বাটিক এবং হস্ত ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মমুখী করে তুলেছেন। 

এছাড়া রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। শাহনাজ পারভীন আরো জানান, তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি জীবনে সম্মানিত হয়েছেন অনেক পদকে। জেলা-উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচবার উপজেলা শ্রেষ্ঠ কাব লিডার নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়াও পথ শিশুদের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ব্যতিক্রম সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় “গ্লোবাল টিচার প্রাইজ- ২০১৭” সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সমাজ উন্নয়নে ২০১৮ সালে জয়িতার সম্মাননাও পেয়েছেন।

তবে তার এই পথচলা সহজ ছিল না বলে জানান তিনি। শাহনাজ পারভীন বলেন, “সমাজের কু-সংস্কার ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। সমাজের অপবাদ মাথা পেতে নিয়েছি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল, চেষ্টা-একাগ্রতা-পরিশ্রম থাকলে একদিন সফল হবই। ধর্ম-বর্ণ-জাত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমরা সকলেই মানুষ। আমরা একে অপরের সহযোগী।” 

তিনি মনে করেন প্রত্যেক নারী সমাজ উন্নয়নে নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে পারবে।