• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০১৯, ০৯:২৭ এএম

পলাশে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

পলাশে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

 

চারদিকে মানুষের বাড়িঘর। মাঠের পর মাঠে চাষ করা হচ্ছে ধান, গম, ধঞ্চে, ডাটা, সরিষা, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন শস্য। এরমধ্যেই কিছুদূর পর পর চোখে পড়ে ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় মাটি যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি থেকে। এই চিত্র নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার।

উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো কোনো জমির মধ্যে যেনো মঝারি সাইজের পুকুর। এক একটি জমিতে ৩ থেকে ৪টি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। কয়েক মিনিট পর পর ট্রলি ভরে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাশ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে। ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বসতভিটার পাশে ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় ৫০ বিঘা জমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। জমির মধ্যখানে খনন করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিগুলোও ভেঙ্গে যাচ্ছে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিনে-দুপুরে কৃষকদের কৃষি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র। আর সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে কৃষকদের।

ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, বেপরোয়াভাবে ট্রলি দিয়ে ইটভাটার মাটি আনা নেয়ার ফলে গ্রামের সব রাস্তাই ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে গেছে। এছাড়া ধুলায় আশেপাশের ঘরবাড়ি, সবজি বাগান,ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিছু বললেই ইটভাটার মালিকরা হুমকি দিয়ে যায়। তাদের কাছে সাধারণ কৃষকরা অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

জয়নাল নামে এক ভ্যাকু চালক জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি এখান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ ট্রলি মাটি নিতে পারছেন। মাটি কাটার বিষয়ে তিনি জানান, ইটভাটার মালিক এসব জমি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। মালিকদের কথায় তারা এখান থেকে মাটি কাটছেন।

ডাঙ্গার ভিরিন্দা গ্রামের জসিম মিয়া ও লাক মিয়া নামে দুই মাটি ব্যবসায়ী ওই গ্রামের প্রায় তিন বিঘা ফসলি জমিতে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে জসিম মিয়া জানান, কৃষকরা এই জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই তারা জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এসব জমির ৫/৬ ফুট খনন করে মাটি সংগ্রহ করবেন বলেও তিনি জানান।

কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা জানান, ফসলি জমির মাটি তারা বিক্রি করেননি। জোরপূর্বক মাটি কাটা হচ্ছে। তারা এলাকার প্রভাশালী বলে কেউ তাদের বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেনা। জনপ্রতিনিধিরাও না দেখার ভান করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধুমাত্র ডাঙ্গা ইউনিয়নেই ছোটবড় ১৮ থেকে ২০টি ইটভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশই ফসলি জমিতে। এসবের কোনটিরই পরিবেশ ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাটার মালিক জালাল হোসেন (জালাল মেম্বার) নামে এক স্থানীয় ইউপি সদস্য। জালাল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ব্যবসা করলে একটু আধটু ক্ষতি হবেই। এটা কোন সমস্যা না। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি জানান, ইউনিয়নের প্রতিটি ইটভাটার মালিক ফসলি জমির মাটি কিনছে আমি কিনলে সমস্যা কি? কৃষকরা নিজেদের ইচ্ছায় মাটি বিক্রি করছেন। এখানে কেউ জবরদখল করেনি।

এ বিষয়ে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অত্যাধিক ইটভাটায় এলাকার ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।  

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানা আলী জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি তিনি জানেননা। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

সাইসে