• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০১৯, ০৮:৪৭ এএম

হাকালুকিতে উদ্বেগজনক হারে কমেছে অতিথি পাখি 

হাকালুকিতে উদ্বেগজনক হারে কমেছে অতিথি পাখি 

 

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বছরে বারো মাসই এই হাওরের গুরুত্ব অসীম। হাকালুকি হাওর যেমন মাছের অবাধ বিচরণ ভূমি হিসেবে পরিচিত তেমনি শীত মৌসুমে অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে এই হাওরের বেশ খ্যাতি রয়েছে।

শীত মৌসুমে প্রতি বছর নানা প্রজাতির অতিথি পাখির কলকাকলিতে হাকালুকি হাওরে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। শুষ্ক এই মৌসুমে হাকালুকির চারিদিকে শূন্যতা ঘুচিয়ে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরপুর হয় চারপাশ। হাওরের পানির সঙ্গে উতাল-পাতাল ঝাপটায় মন মাতানো খেলার সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের আগত প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা। বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলোতে বরফ শীতের কাতরতা থেকে বাঁচতে পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে আসে বাংলাদেশে। শীত কমে আসলে তারা আবার ছুটে যায় নিজ ভূমিতে। 

তবে হাকালুকি হাওরে পাখি দেখতে আসা বেশীরভাগ লোকজন জানান, এ বছর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন কিছু পাখি ছাড়া তেমন পাখির সমাগম লক্ষ্য করা যায়নি। যা গত বছর কিংবা তারও আগের বছর দেখা গিয়েছিল।

জানা যায়, গত ৫ বছরের জরিপে দেশে অতিথি পাখির সংখ্যা কমেছে প্রায় ৪০ ভাগ। গত বছর বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের আয়োজনে হাকালুকি হাওরে পাখি গণনা করা হয়। ওই সময় হাওরের ৪০টি জলাশয়ে জরিপ চালিয়ে ৪৪ প্রজাতির ৪৫ হাজার ১০০ পাখি দেখা গেছে। এর আগে এর আগে ২০১৭ সালে ৫০ প্রজাতির ৫৮ হাজার ২৮৯ পাখি গণনা করা হয়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যা আনুপাতিক হারে অনেক কমেছে। বর্ষা মৌসুমে ৪৮ হাজার হেক্টর জুড়ে বিশাল এ হাওরের আয়তন শুকনা মৌসুমে ২৫ হাজার হেক্টরে নেমে আসে।

পাখি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে পাখি শিকারীদের দৌড়াত্মকে দায়ী করছেন। যদিও পাখি শিকার করা বেআইনি তবুও কেউ শখে, কেউবা জীবিকা নির্বাহ করতে এই চর্চা অব্যাহত রাখে। এ বছর পাখির সংখ্যা কম থাকায় পাখি শিকারীদেরও কম দেখা গেছে। তবে অনেকের ধারনা বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে আমাদের দেশেও শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকায় অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে।

সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের চৌকিয়া বিল, গৌড়কুরী বিল, নাগুয়া বিল, ফুটবিল ও চাতলা বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিচ্ছিন্ন কিছু পাখি এলোপাতাড়ি উড়ছে। নেই প্রাণ চাঞ্চল্যতা। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। আশেপাশে কিছু জলাশয় চোখে পড়লেও সেখানে নেই পাখিদের আধিকতা।  রাখালীরা গরু-মহিষ চড়াচ্ছেন। হু হু বাতাসে অনেকটাই ফাঁকা হাকালুকি হাওর। 

এ সময় গৌড়কুরি বিলের রাখাল জুয়েল জানান, এবার পাখি খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা গেছে। গত বছর এই জায়গায় প্রচুর পরিমান পাখি দেখা গেছে। এ বছর তা দেখা যাচ্ছে না। 

চৌকিয়া বিলের করিম মিয়া, রুবেল মিয়া, রফিক আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পাখি খুব কম দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ জলচর পাখি জরিপের জাতীয় সমন্বয়ক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, প্রতি বছরই প্রচুর অতিথি পাখি হাকালুকি হাওরে বিচরণ করে। আগামী ২৭ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের উদ্যোগে পাখি গণনা করব। পাখি কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাকালুকিতে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারছি না। আমরা হাকালুতির ৮০টি বিলে জরিপ পরিচালনা করবো।

এএস/