• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২, ২০২১, ০২:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২, ২০২১, ০৩:১৩ পিএম

স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে বাজেট চায় উপকূলবাসী

স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে বাজেট চায় উপকূলবাসী

উপকূল রক্ষায় টেকসই ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় বারাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছে উপকূলবাসী।

বুধবার (২জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভালোবাসী খুলনা'র উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।

‘উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে বাজেটে বরাদ্দের দাবিতে’ মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা ঘোষণা, পৃথক উপকূলীয় বোর্ড গঠন ও জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।

সংগঠনের সভাপতি ও গণরাজনৈতিক জোট-গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মইনুজ্জামান লিটুর সভাপতিত্বে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন— সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ জাষ্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক ছাত্রনেতা নিজামউদ্দিন দরবেশ, মানবাধিকার কর্মী নবাব সালেহ আহমেদ, অগ্রগামী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক গোলাম ফারুক মজনু, বাংলাদেশ নাগরিক কল্যাণ ফোরাম সভাপতি মো. শহীদুননবী ডাবলু, খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।

ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকা লুটপাট হয়। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে চলে সীমাহীন দুর্নীতি। এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা-কর্মচারী আর সরকারের প্রভাশালীরা। সে কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর ও সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে দক্ষিণ জনপদের কয়েক লাখ মানুষ। সুতরাং উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের লক্ষে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের দাবি আজ উপকূলীয় জনগণের।

বক্তারা বলেন, সরকার বরাদ্দ দিয়ে পাউবোর ঠিকাদার নিয়োগ করে। সেই ঠিকাদার কাজ না করে অপেক্ষা করতে থাকেন আরো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের। দুর্যোগের পরে ওই ঠিকাদার বলেন, কাজ তো করেছিলাম কিন্তু সব ভেসে গেছে জলোচ্ছ্বাসে। এভাবে প্রতিবারই কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সিডর, আইলা, বুলবুল, মহাসেন, ফণী, আম্পান, ইয়াসের মতো প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে উপকূলের মানুষ টিকে রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ত্রাণের নামে চলে চরম দুর্নীতি। কখনো কখনো ত্রাণের যে তালিকা করা হয়, তার চেয়েও কম মানুষ ওই এলাকায় বসবাস করে। সুতরাং শুধু ত্রাণ দিলেই সমস্যার সমাধান নয়। সমস্যা সমাধানের লক্ষে টেকসই বাঁধ নির্মাণে বাজাটে বরাদ্দ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে উপকূল রক্ষা করতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধের কোনো বিকল্প নেই।

এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভৌত অবকাঠামো, ঘরবাড়ি ও কৃষির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে কয়েকশ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। শত শত গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি। সুন্দরবনের অনেক স্থাপনা, গাছ ও প্রাণীর ক্ষতি হয়েছে। এক খুলনায়ই ৭৫ কিমি. বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, উপকূলীয় ১৪ জেলায় অন্তত কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই অনাহার ও অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। তবে ইয়াসের প্রভাবে জেলাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছেন। এবারের এ দুর্যোগের সময় উপকূলবাসীর মধ্যে একটিই দাবি লক্ষ্য করা গেছে, তা হলো টেকসই বেড়িবাঁধ। সরকারের প্রতি আহ্বান টেকসই বাঁধ নির্মাণে এই বাজেটোই বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মইনুজ্জামান লিটু বলেন, দুর্বল বাঁধের কারণেই বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে শক্ত, মজবুত বাঁধের বিকল্প নেই। দ্রুত বাঁধ নির্মাণের জন্য চলতি বাজেটেই সরকারকে বরাদ্দ দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে সরকারের অর্থ লুটপাট বন্ধে জনসাধারণের বাঁধ জনসাধারণের হাতেই তুলে দিতে হবে; তারাই নির্মাণ করবেন, তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়েই বাঁধে স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা সম্ভব।