• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২১, ১২:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৭, ২০২১, ১২:৪৩ পিএম

নিশ্চিহ্নের পথে লীলা নাগের পৈতৃক বাড়ি

নিশ্চিহ্নের পথে লীলা নাগের পৈতৃক বাড়ি

উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, নারী জাগরণের পথিকৃৎ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ। মৌলভীবাজারের রাজনগরে তাঁর পৈতৃক বাড়ি নিশ্চিহ্নের পথে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিপ্লবী লীলা নাগের পৈতৃক বাড়ি রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আগের কোনো স্মৃতিচিহ্ন অবশিষ্ট নেই বাড়িটিতে। সুনসান নীরবতা বাড়ির চারদিকে। এর মধ্যে দাঁড়িয়ে পৌরাণিক সাক্ষী দিচ্ছে শতবর্ষী রেইনট্রি। বাড়িতে থাকা প্রাচীন এবং দৃষ্টিনন্দন বাংলো আদলের ঘরটিও আর নেই। নেই কোনো স্থাপনার চিহ্ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ ১৯০০ সালের ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১১ জুন ছিল তার ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ করার জন্য ভর্তি হন। তার হাত ধরেই ঢাবিতে নারীশিক্ষার সূচনা। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংগ্রহশালায় লীলা নাগের ছবিসহ এই তথ্যটির উল্লেখ আছে। তবে শুধু এই একটি কারণেই নয়, লীলা নাগ পরিচিত তার ঘটনাবহুল সংগ্রামী জীবনের কারণে। তিনি একাধারে ছিলেন একজন সাংবাদিক, জনহিতৈষী ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। লীলা নাগের পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট। মা কুঞ্জলতা ছিলেন গৃহিণী। ১৯৩৯ সালে বিপ্লবী অনিল রায়কে বিয়ে করেন লীলা। বিয়ের পর তার নাম হয় লীলাবতী রায়।

স্থানীয় সচেতন মহল লেখক-গবেষকরা জানান, ৭১ সালে পাঁচগাঁও গণহত্যার মূলহোতা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যতম অভিযুক্ত প্রয়াত আলাউদ্দিন চৌধুরীর উত্তর-প্রজন্মরা এখন বাড়িটি ভোগদখলে আছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই ২০১৮ সালে পাঁচগাঁও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত চার ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আলাউদ্দিন রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিলেন। এই অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এর আগেই তিনি অক্টোবর ২০১৩ সালে মারা যাওয়ায় তার নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়নি।

বর্তমানে যিনি বাড়ি দখলে রেখেছেন আব্দুল মুনিম চৌধুরীকে না পাওয়া গেলেও, তার মা শামসুন্নাহার চৌধুরীকে পাওয়া যায়। যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধী আলাউদ্দিনের স্ত্রী। তিনি জানান, এই বাড়িটি ঝড়ে পড়ে গেছে, ভাঙা অংশগুলো সরিয়ে রেখেছেন। ৭০ বছর থেকে এ বাড়িতে তারা রয়েছেন। এ বাড়ি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, শতাব্দীর স্মারক হিসেবে ঘরটি সংরক্ষণ ও বাড়িটি উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ এবং লীলা নাগ স্মৃতি পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তৎপর রয়েছেন জেলার সাংবাদিক, শিল্প-সংস্কৃতির মানুষও। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৮ জুন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের ৮৯০ নম্বর স্মারকে সরকারি কৌঁসুলি কাছে মামলার অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

স্থানীয়রা জানান, রক্ষণাবেক্ষণ আর বাড়ির বাসিন্দাদের অবহেলার কারণে সেটি ভেঙে পড়ে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এই বাড়িটি দীর্ঘদিন থেকে দাবি তোলার পরও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, লীলা নাগের বাড়ি উদ্ধার এর লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি সহকারী কমিশনার এর সঙ্গে বৈঠক করেছি। হাইকোর্টে একটি মামলা থাকায় উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সমস্যা রয়েছে। শিগগিরই আরডিসিকে ঢাকায় পাঠিয়ে মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানব এবং এই বাড়ি উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।