• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ০৯:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০২১, ০৯:০৭ এএম

ঝুপরি ঘরে পরিবার নিয়ে দিন কাটছে হারুনের 

ঝুপরি ঘরে পরিবার নিয়ে দিন কাটছে হারুনের 

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা 
ভোট আইলে পরে সবাই আমারে আদর কইরা কোলে নেয় ভোট চইলা গেলে তার পর নেতারা আমারে ফেইক্কা মারে আর কোন খবর রাখে না। আক্ষেপ করে এমনটাই বলতে ছিলেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের দক্ষিণ চৌকিঘাটার আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রেমিক  মো. হারুন পাগলা। এই হারুন পাগলাকে এলাকায় সবাই তাকে এই নামেই চিনে।

জানা যায়,  হারুন বয়স হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও নৌকাকে খুব ভালোবাসে। তার বাপচাচারা সবাই আওয়ামী লীগ করত। সেই থেকে হারুন এখনো নৌকার পাগল। দিনরাত নৌকার প্রতীক ও বঙ্গবন্ধুর সম্বলিত গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার চায় টাকা চায়। এক কথায় ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে তার। 

সরেজমিনে দেখা যায়, হারুন তার ১২ বছরের কন্যা স্বপ্না ও স্ত্রী আছমাকে নিয়ে ১৫ বছর ধরে বাহ্রা দক্ষিণ চৌাকিঘাটার বসু মিয়ার ভিটায় ঝোপের ভিতর পলেথিনের ঝুপরি ঘরে সহায় সম্বলহীন হারুন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছে।

তিনি বলেন, আমার মা বাবার কোন ভিটে মাটি  ছিলো না। তারা মারা গেলে আমি অনাদরে বড় হই। পরে আমি অসহায় আছমাকে বিয়ে করে সংসার শুরু করি। বিয়ের পর আমি উপজেলার কোমরগঞ্জ হাটের পাশে একটা ঝুপরি ঘরে থাকতাম। ওই খানে রাতের কোন এক সময় আমার  প্রথম সন্তান ৫ বছরের সোহেলকে শিয়ালে কামড়ায়। ডাক্তার দেহাইলে পরে সে ভাল হয়। তার কিছুদিন পর লিভার খারাপ হইয়া মারা যায়। পরে ওই জায়গা ছাইরা এই ঝুপের ভিতর ১৫ বছর ধইরা আছি। এইহানেই আমার মেয়ে স্বপ্না অয়। স্বপ্নার পর আক্তার নামে আর একটা ছেলে অয়। শরিলে রক্ত নাই টেকার অভাবে ডাক্তার দেহাইবার পারি নাই। পরে শরিল সাদা অইয়া ৪ বছর বয়সের সময় আক্তার মইরা যায়। এহন মেয়ে স্বপ্নাকে নিয়া আমি স্বপ্ন দেহি।

হারুন বলেন, ভোট আইলে পরে নেতারা আমারে খোঁইজা বাইর করে তার পর আমারে সাজাইয়া গলার মধ্যে ছোট একটা নৌকা ঝুলাইয়া দিয়া মিছিলের আগে আগে রাখে আর বলতে কয় ‘ভোট চাই ভোট চাই’ ‘নৌকা মার্কায় ভোট চাই’ অমুক ভাইয়ের ভোট চাই’।  ভোট শেষ পরে আমারে ফেইক্কা মারে আমার আর কোন খোঁজ নেয় না চেয়ারম্যান মেম্বর ও নেতারা।

হারুন আক্ষেপের সাথে আরো বলেন, এইবার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এত মাইনষেরে ঘর দিলো আমারে কেই একটা ঘর দিলো না। আমি কোথায় যামু আমার মাইয়াডা বড় অইতাছে ঝুপে থাকি পায়খানা করতে অয় অন্য বাইরত্তে। গোসল কইরা বউ মাইয়া কাপড় বদলাইবার পারে না। ঝড় তুফানে দৌড় দিয়া যাই ক্লাব ঘরে। অনেক ভয়ের মধ্যে থাকি। রাইতে জাইগা থাকি খারাপ মাইনষের তো অভাব নাই।

তিনি বলেন, আমি অনেক কষ্ট করছি আমার মাইয়াডার সুখ দেখবার চাই টেকার জন্য আর পড়াইবার পারি নাই স্কুলে দেই নাই অরে একটা ভাল দেইখা বিয়া দিয়া মরতে পারলে আমি শান্তি পামু।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা সিকিম আলী বলেন, আমি হারুনকে বহুবার বলছি তুমি আস চেয়ারম্যানকে বলে একটা ঘর ব্যবস্থা করে দেই। সে আমার কথা শুনে না। ওর মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব আমি নিতে চেয়ে ছিলাম সে আমাকে সেই সুযোগ দেয় নাই।
 
ইউপি চেয়ারম্যান ড. মো. সাফিল উদ্দিন মিয়া বলেন, এর আগে জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে হারুনের নাম দিয়েছিলাম জমি না থাকায় ঘর নিতে পারেনি। এবার তাকে আমরা ঘরের ব্যবস্থা করে দিব।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে তাদের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দীন মনজু বলেন, হারুনের বিষয়ে জানতে পেয়ে আমি সরেজমিনে গিয়েছিলাম। তার ঘরের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাগরণ/এমআর