• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০১৯, ০৯:০৩ এএম

একজন পাখি প্রেমীর গল্প

একজন পাখি প্রেমীর গল্প
পাখির খামার

 

শুরুতে পাখি পালন ছিল শখ। এরপর নেশা, আর নেশা থেকে এখন তা পেশায় পরিণত হয়েছে। পলাশ নামে এক পাখি প্রেমী বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিশাল খামার। তার এই খামারে বিদেশি ২৫-৩০ প্রজাতির পাখি ছাড়াও রয়েছে ৪০ প্রকারের ২০০ কবুতর।

পাখির মধ্যে ম্যাকাও, কাকাতুয়া, আফ্রিকান গ্রেপ্যারট অন্যতম। পাখি পালন করে গত চার বছরের ব্যবধানে পলাশ হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী। নিজের সংসার চালানোর পাশাপাশি তার পাখির খামার বড় হচ্ছে দিন দিন।

বগুড়া সদরের গোকুল পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুর রহমান পলাশ। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে শুরু করেন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ব্যবসা। ব্যবসার পাশাপাশি ২০০০ সালে নিজের বাড়িতে শখ করে কিছু কবুতর এবং বাজরিগার পাখি পালন শুরু করেন। একপর্যায়ে পাখি পালন তার নেশায় পরিণত হয়। ২০০৬ সালে ব্যবসা ছেড়ে পাড়ি জমান মালয়েশিয়া। সেখানে থাকা অবস্থায় আবারো পাখি পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি।

মালয়েশিয়ায় থেকে তিনি ২০১৩ সালে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরেই বিদেশি প্রজাতির পাখির সমন্বয়ে খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের শুরুতে আড়াই লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ছোট একটি টিনশেড ঘরে শুরু করেন পাখি পালন।

পাখি প্রেমী আতিকুর রহমান পলাশ  জানান, শুরুতে পুঁজি হিসেবে আড়াই লাখ টাকার পর নতুন করে আর বিনিয়োগ করতে হয়নি। তার খামারে বংশবিস্তারের মাধ্যমে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। পাখি বিক্রি করেই তিনি তার সংসারের যাবতীয় ব্যয় মিটান। পাশাপাশি খামার দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের বেতন দেন এখান থেকেই।

পলাশ জানান, তার খামারে পালন করা আমেরিকান এক জোড়া ম্যাকাও পাখি বিক্রি করেন ৩ লাখ টাকায়। বর্তমানে তার খামারে তিন জোড়া ম্যাকাও পাখি রয়েছে। কাকাতুয়া পাখির এক পিস বাচ্চা বিক্রি করেন দেড় লাখ টাকায়।

সরেজমিনে পলাশের পাখির খামারে গিয়ে দেখা যায়, কাকাতুয়া ছাড়াও কয়েক প্রজাতির পাখির সঙ্গে পলাশের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। অনেকটা মানুষের মতো কথাও বলতে পারে দু’একটি পাখি। নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে এসে পলাশের মাথায় কিংবা ঘাড়ে বসে খাবার খাচ্ছে।

পলাশ জানান, পাখির প্রতি তার ভালোবাসা ছোট বেলা থেকেই। তার খামারে লালন-পালন করা পাখিগুলোকে সন্তানের মতোই দেখেন। নিজের খেতে দেরি হলেও সময় মতো পাখিদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আর এ কারণেই পাখিগুলো তাকে ভয় না পেয়ে কাছে আসে।

পাখি প্রেমী পলাশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তার খামারে

পাখির খামার দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত বাদল মিয়া জানান, বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি পোষ মেনেছে। খাঁচা থেকে বের হয়ে উড়ে গেলেও নাম ধরে ডাকলে আবারো ফিরে আসে। পাখির খামারে কাজ করতে গিয়ে তিনিও পাখি ভক্ত হয়ে গেছেন।

পাখি প্রেমী পলাশ জানান, গুগল থেকে পাখির প্রজাতি এবং খাবার, রোগ ব্যাধি এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি। তবে মাঝে মধ্যে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শও নিয়ে থাকেন।

এদিকে পাখি ছাড়াও পলাশের খামারে রাশিয়ান তিনটি বিড়াল রয়েছে। যেগুলোর একেকটির দাম ৫০ হাজার টাকার উপরে।

পলাশ আরও জানান, পাখি কেনাবেচার জন্য তাকে কোনো হাটবাজারে যেতে হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌখিন লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাখির খামার করে এখন স্বাবলম্বী তিনি। আড়াই লাখ টাকা পুঁজি থেকে তার খামারে এখন ৫০ লাখ টাকার পাখি রয়েছে। বেকার যুবকদের চাকরির পেছনে না ঘুরে পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

টিএফ