• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ১২:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ১২:৫৪ এএম

‘চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার অপপ্রয়াস’

‘চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার অপপ্রয়াস’
সংগৃহীত ছবি

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম ।।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি মুহাম্মদ এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ১২৫ বছরের একটি পেশাজীবী সংগঠন। দেশের অনেক প্রতিথযশা আইনজীবী এই সমিতির সদস্য ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সব সংগ্রামে এই সমিতির সদস্যদের অবদান দেশব্যাপী স্বীকৃত।

দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রয়েছে এ সমিতির আত্মার বন্ধন। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন স্বৈরশাসকের গুলির মুখে প্রধানমন্ত্রীকে মানবঢাল বানিয়ে জীবনরক্ষায় এগিয়ে এসেছিল এ সমিতির সদস্যবৃন্দ।

বহু বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতার গর্বের সংগঠন এই সমিতি। এ সমিতির বহু সদস্য দেশের মন্ত্রী, মেয়র, এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের মান, মর্যাদা, সম্মান ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস জেলা প্রশাসন চালিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক এবং পাশাপাশি উদ্দেশ্যমূলকও বটে।

সারাদেশ তথা চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ক্রমবর্ধমান সদস্যবৃন্দের প্রয়োজনের বিষয় বিবেচনা করে এবং আইনজীবী সমিতির নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ৩০.১২.১৯৭৭  তারিখের ১৪৮৮৮ নং লীজ দলিল মূলে চট্টগ্রাম কোর্টহিলে সরকারি খাস জমি চৌহদ্দি উল্লেখপূর্বক সরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবরে হস্তান্তর করা হয়। যা সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত নয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনগুলো সিডিএ কর্তৃক যথাযথভাবে অনুমোদিত। যা সিডিএ কর্তৃক জেলা প্রশাসনকে পত্র মারফতে এর আগেও অবগত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনসমূহ নির্মাণের সময় কোনও পাহাড় টিলা কাটা হয় নি। যদি পাহাড় টিলা কাটা হতো তবে নিশ্চয় সে সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধা প্রদান করতো। সমিতির ভবনসমূহ অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে যথাযথ গুণগত মান রক্ষা করে নির্মাণ করা হয়েছে।

সমিতির প্রত্যেক ভবনের রয়েছে একাধিক সিড়ি ও আসা-যাওয়ার পথ। সমিতির প্রস্তাবিত ‘আইনজীবী একুশে ভবন’ যে স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে তা  এর আগে সিডিএ থেকে অনুমোদিত স্থানেই নির্মাণ করা হচ্ছে। অপর ভবন নির্মাণের জন্য সিডিএ’র অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সমিতির ভবনসমূহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদানে এবং সমিতির নিজস্ব অর্থায়ণে নির্মিত হয়। ভবনসমূহ নির্মাণে বিভিন্ন দফায় প্রধানমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেয়া হয়। সমিতির কোনও ভবন অবৈধ হলে প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রণালয় অনুদান প্রদান করতেন না। ভবনসমূহের নির্মাণ কাজও সংশ্লিষ্ট সময়ে মন্ত্রীগণ কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়। কোর্ট বিল্ডিংয়ের চারপাশে সমিতির কোনও অবৈধ স্থাপনা নাই।

দোকানপাট, খাবার হোটেল, মুদি দোকান, রাস্তার হকার, বস্তি ইত্যাদি স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই জেলা প্রশাসন কর্তৃক লিজ প্রদানকৃত ও কিছু অংশ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ কর্তৃক ভাড়া চালিত। যা থেকে জেলা প্রশাসন মাসিক/দৈনিক ভাড়া উত্তোলন করে। ওই সব স্থাপনাগুলোতে জেলা প্রশাসনের ছত্রছায়া, নাকের ডগায় বিভিন্ন অনৈতিক কাজ, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি হয়ে আসছে।

এসব অনৈতিক কার্যকালাপ বন্ধ করতে এর আগেও জেলা প্রশাসন থেকে কোনওরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় কোনও ছাত্রাবাস নাই। যা জেলা প্রশাসনের কল্পনাপ্রসূত।

জেলা প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণেই ২০১২ সালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত সিসি টিভি ক্যামরা আইনজীবী নেতৃবৃন্দ কখনই অপসারণ করেন নি। আইনজীবী ভবন সংলগ্ন রাস্তার বৈদ্যুতিক পোল, ব্রিজ ইত্যাদিতে এখনও প্রশাসনের সিসিটিভি ক্যামরা বিদ্যমান রয়েছে।

আদালত এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে সমিতির প্রত্যেকটি ভবনের সম্মুখে সমিতির নিজ ব্যয়ে ২০১৫ সাল থেকেই সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন করা হয়। আইনজীবী সমিতি নিজস্ব অর্থায়নে ১০০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন করে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংযোগ নিয়ে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে। যার সত্যতা বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করলে জানা যাবে।

সমিতিতে কোনও অবৈধ বিদ্যুৎ বা পানির সংযোগ নাই। ঐতিহ্যবাহী পুরাতন আদালত ভবনটি তদসময়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা ভেঙে একটি নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী পুরাতন ভবন ভাঙার জন্য ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়।

আইনজীবী সমিতি সহ চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের উদ্যোগে উক্ত পুরাতন আদালত ভবনটি সংস্কার করে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য মামলা করা হয়। যার প্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে পুরাতন আদালত ভবন না ভেঙে সংস্কার করে পুরার্কীতি হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়।

নতুন আদালত ভবন নির্মাণের আগে পুরাতন আদালত ভবনে চট্টগ্রামের সব আদালতের কার্যক্রম চলত। আদালতের এজলাস, বিচারকদের খাস খামরা, সেরেস্তা অফিস, হাজতখানা, রেকর্ডরুম, আইনজীবীদের মিলনায়তন ইত্যাদি পুরাতন আদালত ভবনেই ছিল।

যেখানে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসনের কোনও কার্যালয় ছিল না। আইনজীবীগণ পুরাতন আদালত ভবনের কোনও কক্ষ দখল করেন নি।

পুরাতন আদালত ভবন সংস্কারের পর জেলা প্রশাসনই জোরপূর্বক ওই ভবনটি দখল করে নেয়। যে ভবনে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের ৩য়/৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য বড় বড় কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।

জাগরণ/এমএ